চৈত্রের ঝাঁপ আরম্ভ হয় গাছ থেকে মায়ের ‘স্পেশ্যাল’ ফুল পড়া মাত্রই

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : ছ’শো বছর আগের কথা প্রায়। দামোদর বয়ে চলেছে শ্যামপুরের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের পাশ দিয়ে। প্রচলিত জনশ্রুতি অনুসারে , নদীপথে ব্যবসা করতে যাওয়ার সময় বণিক চাঁদ সদাগর শ্যামপুরের রতনপুর গ্রামে ‘রত্নমালা’ দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন বর্ধমানের মহারাজা বিজয় চাঁদের উদ্যোগেই। শ্যামপুর-২ ব্লকের আমড়দহ অঞ্চলের রতনপুর গ্রাম প্রতিবছরের মতো এবছরও মেতে উঠেছে এই রত্নমালা মন্দিরের কয়েক’শো বছরের প্রাচীন ঝাঁপ ও গাজন উৎসবকে কেন্দ্র করে। তবে তখনই ঝাঁপ শুরু হবে যখন গাছ থেকে মায়ের বিশেষ ফুল পড়বে।

চৈত্র‍সংক্রান্তির পাঁচদিন আগে থেকেই রতনপুরে গাজন উৎসব শুরু হয়েছে চিরাচরিত রীতি মেনেই। উদ্যোক্তারা জানান, মূল উৎসবের শুরু হয় চৈত্র‍ সংক্রান্তির আগের দিন থেকেই। নীলরাত্রিতে সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয় নীলের বিয়ে। দীর্ঘ কয়েক দশকের রীতি মেনে হাওড়া জেলার নিজস্ব লোকনৃত্য কালিকাপাতাড়ি অনুষ্ঠিত হয় নীলের বিয়ের আসরকে মাতাতে।কালিকাপাতাড়ি নৃত্য প্রদর্শন করেন রতনপুর রত্নমালা কালিকাপাতাড়ি নৃত্য সংস্থার জ’না পনেরো কুশীলবরাই। নীলষষ্ঠী থেকেই রত্নমালা মন্দির প্রাঙ্গণে কাতারে কাতারে মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। পরের দিন অর্থাৎ চৈত্র‍ সংক্রান্তির দিন অনুষ্ঠিত হয় ‘রত্নমালা’র প্রসিদ্ধ ঝাঁপ। রীতিমতো দেখার মতো সে ঝাঁপও।

স্থানীয়দের দাবি, এটি বর্তমানে সর্বোচ্চ ঝাঁপ এই অঞ্চলের। জানা যায়, আগে ৬৫-৭০ ফুট উঁচু থেকে ঝাঁপ পড়লেও সেই উচ্চতা কমিয়ে ২৫-৩০ ফুটে নামানো হয়েছে কয়েক বছর আগে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ায়। ঝাঁপে অংশগ্রহণকারী পুণ্যার্থীর সংখ্যাও বেশ কিছুটা কমেছে কালের নিয়মেই। আগে ১৫-২০ জন ঝাঁপ পড়লেও এখন ৩-৪ জন পড়েন। কিন্তু, এই সুপ্রাচীন গাজন উৎসবের সাড়ম্বরের কোনো ঘাটতি নেই।স্থানীয় এলাকায় বহু জনশ্রুতিও প্রচলিত রয়েছে সু-প্রাচীন এই ঝাঁপ উৎসবকে ঘিরে। শোনা যায়, এখানে রয়েছে একটি পুরানো নারকেল গাছ। তার সমান ঝাঁপ বাঁধানো হয়। মা ফুল ফেললে তবেই নাকি ঝাঁপ আরম্ভ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *