রাসবিহারী বসু স্বাধীনতা যুদ্ধের পা মজবুত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের পি এ হিসাবে

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : বাইরে থেকে তাঁর বেশবাস একজন সরকারি চাকরিজীবী। ভদ্রলোক। কখনও স্কুলে শিক্ষকতা তো কখনও বন দফতরে। কিন্তু গোপনে তিনি যে ব্রিটিশদের চোখে একজন ভয়ানক বিপ্লবী ছিলেন ব্রিটিশরা বিলক্ষণ সেটা জানত। কিন্তু সব জেনেও কোনওদিন তাঁকে ছুঁতে পারেনি ব্রিটিশরা। এমন এমন সব ছদ্মবেশ তিনি নিতেন যে তা ছিল ব্রিটিশদের ধারনার বাইরেই। যেমন জাপানে তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবেই। এবার একবার ভাবুন……কে ছোঁবে বিশ্বকবির এই পি.এ’কে? তাও ইতিমধ্যেই নোবেল পেয়ে গিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও।

১৯১৫ সালের মার্চ মাসের শেষের দিকে সন্ন্যাসীর বেশে জাপানের উদ্দেশ্যে রওনা দেন কলকাতাগামী ট্রেনে চেপে। স্টেশনে স্টেশনে তাঁর ছবিসহ পোস্টার লাগানো থাকায় নানা কৌশল অবলম্বন করে রাসবিহারী বসু অবশেষে জাপানে পৌঁছান ভিন্ন ভিন্ন পথ অবলম্বন করে। এশিয়ার প্রথম নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাপান ভ্রমণে যাচ্ছেন ভারতের পত্রপত্রিকায় ১৯১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে এরকম সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর রাসবিহারী বসু সেটা দেখে জাপানে থাকার সিদ্ধান্ত নেন এবং জাপানে বসবাসও শুরু করেন রবীন্দ্রনাথের সচিব হিসেবে (মতান্তরে আত্মীয়) পি. এন. ঠাকুর (প্রিয়নাথ ঠাকুর) নাম ধরে।

এরপর যা হয়েছে তার পুরোটাই ইতিহাস। তবে অনেকটাই লুকোনো।রাসবিহারীর ত্যাগ , লড়াই কোথাও যেন হারিয়ে যায় সুভাষের চাপে পড়ে। জাপানে এসে তিনি জানতে পারেন জাপানে অবস্থান করছেন চীনা জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী-নেতা ড. সান-ইয়াৎ সেন। তিনি এমনকি সাক্ষাৎ করেন তাঁর সঙ্গেও। সান-ইয়াৎ সেন এবং প্যান্-এশিয়ানিজমের অন্যতম প্রধান উদ্গাতা তোয়ামা মিৎসুরুর শিষ্যত্বও এমনকি গ্রহণ করেন তিনি। এই বিপ্লবীকে জাপানে আশ্রয় এবং সর্বপ্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দেন গুরু তোয়ামা। এভাবেই বিদেশে সূচনা হয় বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর নতুন রাজনৈতিক জীবনের।

ভারতীয়দেরকে সংঘবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ১৯২১ সালে রাসবিহারী বসু জাপানে সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠা করেন ‘ভারতীয় স্বাধীনতা সংঘ’ এবং সেই সঙ্গে দায়িত্ব গ্রহণ করেন সংঘের প্রেসিডেন্টেরও। ১৯৩২ সালে বৃটিশদের পক্ষে ক্রমশ অসহনীয় হয়ে উঠে ইংরেজ-বিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন। কাজেই তারা সুযোগ খুঁজছিল পলাতক বিপ্লবীদেরকে কিভাবে গ্রেফতার করা যায়।কিন্তু রাসবিহারী বসু জাপানে বিয়ে করে জাপানি নাগরিকত্ব গ্রহণ করার ফলে ব্রিটিশ দের সেই সুযোগ সম্পূর্ণ নস্যাৎ হয়ে যায়।

১৯৪১ সালে মুক্তির সুযোগ সৃষ্টি হয় বহু বছরের পরাধীন ব্রিটিশ উপনিবেশ ভারতবর্ষের। রাসবিহারী বসু ভারতীয়দেরকে সংগঠিত করার দায়িত্ব দেন বিশ্বস্ত এম. এন. রায়কে মাঞ্চুরিয়াতে দূত হিসেবে পাঠিয়ে। ওই বছরই রাসবিহারী বসুর উদ্যোগে টোকিও, য়োকোহামা, ওসাকা, কোবে, নাগাসাকি প্রভৃতি জায়গায় বসবাসরত ৭০ জনেরও বেশি ভারতীয় জড়ো হয়ে আহবান করেন ‘ভারতীয় স্বাধীনতা সংঘ’র মহাসভা এবং উত্তোলন করেন এমনকি লীগের পতাকাও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *