সামনেই রথযাত্রা অনুষ্ঠান , এমনকি মাতবে গোটা দেশ, কিন্তু জানেন কি জগন্নাথের মূর্তির কেন এমন চেহারা? বিস্তারিত জেনেনিন

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ :এবছর রথযাত্রা পড়েছে একেবারে মাসের প্রথম দিন পয়লা জুলাই। আর রথযাত্রা মানেই জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা। হিন্দুদের চার ধামের অন্যতম শ্রীক্ষেত্র হল নীলাচল অর্থাৎ পুরী। আর কাতারে কাতারে মানুষের ভিড়। সবটাই হয়ে থাকে রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে। কিন্তু, রথযাত্রা যাদের নিয়ে, মানে জগন্নাথ, বলভদ্র আর সুভদ্রা- ভক্তদের কৌতূহলের কিন্তু শেষ নেই তাদের ব্যাপারে।

সাধারণত আমরা হিন্দুদের যেমন দেবদেবী আমরা দেখি, কিন্তু তার সঙ্গে মেলে না জগন্নাথ, বলভদ্র আর সুভদ্রার মূর্তি। হিন্দুদের মূর্তি মানেই ভগবান বেশ সাজানো গোছানো, পরিপাটি চেহারার। হাতে অস্ত্র, সঙ্গে বাহন- সে কত কিছু! এমনকি জগন্নাথদেবেরও তেমনটাই হওয়ার কথা ছিল। বলভদ্র, সুভদ্রারও তাই। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এর অবশ্য একটা বিশেষ কারণ আছে। আছে এক বিরাট কাহিনি।

কথিত আছে প্রথম জগন্নাথ মন্দিরের নির্মাণ করিয়েছিলেন ওড়িশার রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন। তিনি মূলত স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। স্বপ্নে জগন্নাথ তাঁকে নীলাঞ্চল পর্বতের গুহা থেকে তাঁর মূর্তি নিয়ে আসার আদেশ দিয়েছিলেন। রাজা এনিয়ে কথা বলেন রাজপুরোহিত বিদ্যাপতির সঙ্গে। বিদ্যাপতি এমনকি জানতেন নীলাঞ্চল পর্বতের গুহায় শবররা নীলমাধবের মূর্তি লুকিয়ে রেখেছে। যার পুজো করেন শবরদের দলপতি তথা নীলমাধবের পরম ভক্ত বিশ্ব বসু।

রাজার আদেশে বিদ্যাপতি বিশ্ব বসুর মেয়েকে বিয়ে করেন মূর্তি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য । আর, সেই মেয়ের সাহায্যে নীলমাধবের মূর্তি গুহা থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেন। বিদ্যাপতি তো আর এসব জানতেন না। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন মূর্তি না-পেয়ে । এরপর ফের জগন্নাথ রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নকে স্বপ্নাদেশ দেন। ফের নির্দেশ দেন মূর্তি নীলাঞ্চল পর্বতে রেখে আসার। সেই স্বপ্ন দেখার পরই রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ করান। তিনি প্রার্থনা করেন সেখানে জগন্নাথকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার।

এরপর জগন্নাথদেব ফের ইন্দ্রদ্যুম্নকে স্বপ্নাদেশ দেন। স্বপ্নে জানান, দ্বারকা থেকে ভেসে আসবে নিমকাঠের গুঁড়ি। তা দিয়েই তাঁর মূর্তি তৈরি করতে হবে। এমনকি স্বপ্নও মিলে যায়। পরের দিন ভোরেই পুরীর সৈকতে কোথা থেকে একটা বিশাল নিমকাঠের গুঁড়ি ভেসে আসে। কিন্তু, সেই গুঁড়ি এতই ভারী ছিল যে রাজার সৈন্যরা হাজারো চেষ্টা করেও ডাঙায় তুলতে পারেননি গুঁড়িটিকে। এরপর ডাক পড়ে বিশ্ব বসুর। তিনি এসে একাই নিমকাঠটি ডাঙায় তোলেন কাঁধে করে ।

এরমধ্যেই আচমকা এক বৃদ্ধ কারিগরও কোথা থেকে এসে হাজির হন । তিনি শর্ত দেন, একাই মূর্তিগুলো তৈরি করবেন কারও সাহায্য ছাড়া । মূর্তি তৈরি করে দেবেন ২১ দিনের মধ্যে । কিন্তু, মূর্তি তৈরির সময় এই ২১ দিন সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে মন্দিরের দরজা। রাজা সেই শর্ত মেনে নেন। কিন্তু, এই খবরে আগ্রহ ক্রমশ বাড়তে থাকে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নর স্ত্রী গুন্ডিচা দেবীর। তিনি আড়ি পাততে শুরু করেন মন্দিরের দরজায় ।

বৃদ্ধ কারিগর কতটা কাজ করছেন, আড়ি পেতে শোনার চেষ্টা করেন সেই শব্দ। কিন্তু, গুন্ডিচা দেবীর মনে চরম আশঙ্কা তৈরি হয় ভিতর থেকে কোনও শব্দ না-পাওয়ায় । তিনি রাজাকে বোঝান, মন্দিরের ভিতরে নিশ্চয়ই না-খেতে পেয়ে মারা গিয়েছেন বৃদ্ধ কারিগর। রানির বারবার এমন অভিযোগে শেষপর্যন্ত মন্দিরের দরজা খোলার নির্দেশ দেন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন।কিন্তু, কারিগরকে পাওয়া যায়নি ভিতরে হাজারো খুঁজেও । দেখা যায় তিনটি মূর্তি অসম্পূর্ণ। তার মধ্যে অর্ধেক হাত তৈরি হয়েছে জগন্নাথ ও বলভদ্রের। আর, সুভদ্রার হাত এবং পা কোনওটাই তৈরি হয়নি। উপায় না-পেয়ে ওই মূর্তিই প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দেন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন। সেই থেকে রথযাত্রা চলছে জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রার অসমাপ্ত মূর্তিতেই। এমনকী
ওই মূর্তিতেই চলছে নিত্যপুজোও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *