কে বি সিতে উত্তরবঙ্গের নাম উজ্জ্বল করলেন মালবাজারের গৃহবধু অলোকা ভট্টাচার্য্য গুহ
নিজস্ব সংবাদদাতা : ভারতবর্ষের অত্যন্ত জনপ্রিয় কুইজ শো কন বানেগা করোরপতিতে যাবার স্বপ্ন অনেকেরই থাকে। কিন্তু পৌঁছাতে পারে কজন? ১৮ বছরের প্রচেষ্টায় সেই স্বপ্নই সফল করেছেন মালবাজারের মেয়ে অলোকা ভট্টাচার্য গুহ মূলত মায়ের অনুপ্রেরণায় এবং শশুর বাড়ি, বাপের বাড়ির সকল সদস্যদের সহযোগিতায় তার এই কেবিসির যাত্রা সফল বলে জানিয়েছেন অলোকা দেবী। ভারতবর্ষের এই মেগা কুইজ কনটেস্টে তার প্রাপ্তি ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। যা দিয়ে ভবিষ্যতে তার চার বছরের ছেলে অর্ক গুহর ভবিষ্যতের পড়াশোনা এবং বাবা-মায়ের বাড়ি তৈরির জন্য ভাইকে সাহায্য করতে চান।
অলোকা জলপাইগুড়ি এসি কলেজ থেকে জুওলজি অনার্স নিয়ে পাস করার পর গৃহ শিক্ষকতা শিক্ষকতা করতেন মালবাজার সিজার স্কুলে। পড়াশোনাও এই স্কুলেই তার। আইসিডিএস প্রকল্পের সুপারভাইজার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অপেক্ষা করছেন জানুয়ারিতে সরকারি পদে যোগ দেবার। মালবাজারের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রমোদনগর কলোনিতে বাবার বাড়ি। বিয়ে হয়েছে বছর পাঁচেক, স্বামী কলকাতায় বেসরকারি ফার্মে কর্মরত। স্বামী পিনাকী গুহ বাচ্চা এবং শ্বশুর শাশুড়িকে সামলেছেন তার শুটিং এর সময়। সঙ্গে গিয়েছিলেন ভাই অয়ন ভট্টাচার্য। ফোন ফ্রেন্ড অপশনে তিনি বেছে নিয়েছিলেন বর্তমান সিজার স্কুলের আরেক তরুণ শিক্ষক সুদীপ মজুমদারকে। তিনি জানিয়েছেন সবাই খুব কোঅপারেট করেছে আমার এই যাত্রা পথে। সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ থাকব সারা জীবন।
মা একসময় থিয়েটার করতেন। ইচ্ছে ছিল টিভিতে অ্যাক্টিং করার। কিন্তু বিয়ের পর তা সম্ভব হয়নি। চাইতেন মেকে যাতে একবার অন্তত টিভি পর্দায় দেখা যায়। সেই যাত্রা পথ শুরু হয়েছিল ১৮ বছর আগে। বেশ কিছু বছর আগে একবার গ্রাউন্ড অডিশনের সিলেক্ট হলেও ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি। সুযোগ আসে এই বছর প্রি রেজিস্ট্রেশন করার পর। দুই দুইবার লটারি এবং টেলিফোনিক অডিশন হয় । সেখানে নির্বাচিত হয়ে মে মাসে হঠাৎ খবর আসে অডিশন দিতে যেতে হবে মুম্বাইয়ে। কিন্তু ট্রেনের টিকিট না পেয়ে, ফ্লাইট এর টিকিটের ভাড়া যোগাড় করতে না পেরে অডিশন দিতে যেতে পারেননি। সেই সময় অত্যন্ত হতাশ হয়ে পড়েন । কিন্তু জুন মাসে হঠাৎ আবার ফোন আসে অনলাইন অডিশন এর জন্য। সেই ধাপ পেরিয়ে দুই দুইবার পার্সোনাল ইন্টারভিউ এর পর সেপ্টেম্বর মাসে ফাইনাল শুটিংয়ের জন্য সুযোগ পান। আর সেখান থেকেই পৌঁছে যান অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে হট সিটে। জীবনের যাত্রা পথের গল্প শুনিয়ে, মাত করে দেন অমিতাভ বচ্চন সহ দর্শকদেরও। তিনি মঞ্চ থেকে ধ্বনি দেন “জয় হো কেবিসি”। অলোকা তার সহজ সরল বাচনভঙ্গি, তার কেবিসির যাত্রাপথের কাহিনী গম্ভীর থাকতে দেয়নি অ্যাংরি ইয়ংম্যান কেও। এপিসোড সম্প্রচারিত হবার পর গতকাল অমিতাভ বচ্চন এপিসোডের ক্লিপিংস তার টুইটার একাউন্টে শেয়ার করেন যার ট্যাগলাইন ছিল “জয় হো।”
সব মিলিয়ে কেবিসিতে গিয়ে রাতারাতি স্টার মালবাজারের এই কন্যা। প্রতিনিয়ত ফোন আসছে বিভিন্ন মিডিয়া হাউজ থেকে ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম এ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ফলোয়ার। তবে এই সব কিছুর কৃতিত্ব তিনি দিচ্ছেন তার আপনজনদের। ভাই অয়ন ভট্টাচার্যের কথায় দিদির স্বপ্ন সফল, আমরাও সবাই খুশি। স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জীব চক্রবর্তীর কথায় অলোকা প্রমাণ করলো ইচ্ছে আর প্রচেষ্টা থাকলে সফলতা আসবেই। একটু দেরি হতে পারে কিন্তু আসবে নিশ্চিত। অমিতাভ বচ্চন কেমন হেসে এক কথায় জবাব অত্যন্ত বিনয়ী। ঠিক আমাদের উত্তরবঙ্গের মানুষের মতো। তিনি আমার সাথে গুরুজনদের মতন ব্যাবহার করেছেন। আমি গর্বিত এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরে জানালেন অলোকা দেবী।