জন্ম থেকেই নেই তার দু’টো হাত, পা দিয়েই মানুষ গড়ার কাজে ব্রতী আউশগ্রামের প্রধান শিক্ষক জগন্নাথ বাউরি
বেস্ট কলকাতা নিউজ : জগন্নাথদেবের দুই হাত নেই ৷ জয়কৃষ্ণপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের তাই ৷ কাকতালীয়ভাবে তাঁর নামও জগন্নাথ ৷ ঈশ্বর আর মানুষের মধ্যে পার্থক্য থাকে অনেক ৷ এক্ষেত্রে অবশ্য অমিলের চেয়ে মিলই বেশি ৷ হাত থেকেও জগন্নাথদেব যেমন অকাতরে কৃপা করেন ভক্তদের ৷ আউশগ্রামের জগন্নাথও হাত ছাড়াই জিতেছেন জীবনযুদ্ধে ৷ এখন ব্রতী হয়েছেন মানুষ গড়ার কাজে ৷ রক্ত-মাংসের এই জগন্নাথের পুরো নাম জগন্নাথ বাউরি ৷ থাকেন পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম-1 ব্লকের বেলেডি গ্রামে । জন্ম থেকেই তাঁর দু’টো হাত নেই । জন্মের পর থেকেই জগন্নাথকে নিয়ে চিন্তায় থাকতেন তাঁর মা ৷ ভাবতেন, হাত নেই ছেলের ৷ লেখাপড়া শিখবে কী করে ? কীভাবে জীবন চালাবে ?

তবে হাল ছাড়েননি জগন্নাথ বাউরির প্রতিবেশী তথা শিক্ষক ভূতনাথ পাল ৷ ভূতনাথবাবুর হাত ধরেই কার্যত জীবনযুদ্ধের জয়ের সোপান পার করা শুরু করেন জগন্নাথ ৷ তিনি বলেন, ‘‘জন্ম থেকেই আমার দু’টো হাত নেই । আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভূতনাথ পালের ঐকান্তিক চেষ্টায় আমার লেখাপড়া শুরু হয় । কিন্তু আমার মা ভাবতেন যেহেতু আমার দু’টো হাত নেই, তাই আর কি আমি লেখাপড়া শিখতে পারব ? কার্যত প্রধান শিক্ষক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমাকে লেখাপড়া শেখান । আমি পা দিয়ে লেখা, বইয়ের পাতা উলটানো-সহ অন্যান্য সমস্ত কাজ করতে শুরু করি । ধীরে ধীরে সব কাজ শিখে যাই ।’’
জগন্নাথ বাউরির কথায়, ভূতনাথবাবু তাঁকে উৎসাহ দিয়ে বলেছিলেন – ‘দু’টো হাত নেই তো কী হয়েছে ? মনের জোর থাকলে দু’টো পা দিয়েই নিজের পায়ে দাঁড়ানো যায় । পা দিয়েই লেখাপড়া শেখা যায়’ । সেই উৎসাহকে পাথেয় করেই দুই পায়ের ভরসায় নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন জগন্নাথ । এখন শিক্ষক হিসেবে ছোট-ছোট বাচ্চাদের শিক্ষাদান করছেন তিনি ৷ ক্লাসে গিয়ে পায়ের দু’টো আঙুলের ফাঁকে চক তুলে নিয়ে বোর্ডে পা তুলে সাবলীলভাবে তিনি অঙ্ক শেখান ছাত্রছাত্রীদের । লেখার ক্ষেত্রেও নেই কোনও জড়তা । ফলে ছাত্রছাত্রীদের পড়া বুঝতে অসুবিধা হয় না ।