অবাক করা এক পরিস্থিতি পাহাড়ে , একেবারেই ভিড় নেই সিকিম এবং দার্জিলিং এ
নিজস্ব সংবাদদাতা : সন্ধ্যা হলেই গ্যাংটকের এমজি মার্গে ভিড়টা জমাট বাধে। রাস্তা থেকে রেঁস্তরা, উপচে পড়ে ভিড়। পুজো পর্যটনে তো একটু বসে থাকার জায়গা পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সন্ধ্যায় সিকিমের প্রধান পর্যটনস্থলটি অনেকটাই ফাঁকা। এদিকে একেবারে ভিড় নেই দার্জিলিংয়ের চৌরাস্তায়, তা নয়। কিন্তু পুজো পর্যটনের সেই চেনা ভিড়টা উধাও। তিনদিন আগেও যেখানে শুধুই কালো মাথার ভিড় ছিল, এদিন বিকেলে সেখানে ভিড়টা অনেকটাই হালকা। হোটেলগুলির তথ্য বলছে, রবিবারের পর এই ভিড়টাও আর দেখা যাবে না।
পুজো পর্যটনকে কেন্দ্র করে অতীতে এমন ছবি দেখা যায়নি গ্যাংটক বা দার্জিলিংয়ে। পুজো শুরু হওয়ার আগেই পর্যটকদের মিছিল পৌঁছে যেত দুই পাহাড়ে। যা থেকে যেত লক্ষ্মীপুজোর পরেও। কিন্তু এবার পুজোর শুরুর দিন থেকে ভিড়টা জমাট বাধতে শুরু করলেও, পুজো শেষ হতেই তা হালকা হওয়া শুরু হয়েছে। যা দেখে দিওয়ালি নিয়ে উদ্বেগ ধরা পড়ছে পর্যটন মহলে। দুর্গাপুজোয় পাহাড় যেখানে হয়ে থাকে বাঙালি পর্যটকদের, সেখানে দিওয়ালি পাহাড় দখল নেয় অবাঙালি ভিন রাজ্যের পর্যটকরা। সাধারণত তাঁরা আগাম হোটেল বুক করেই পাহাড়ের পথ ধরেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আউটবাউন্ড ট্যুরিস্টদের বুকিং তেমন নেই বলেই জানাচ্ছে হোটেলগুলি। একারণেই দুশ্চিন্তা।
পুজো পর্যটনে যে এবছর সিকিম মার খাবে, তা আগাম স্পষ্ট হয়েছিল ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের বেহাল দশায়। কিন্তু তেমন লক্ষ্মীলাভ হয়নি দার্জিলিং পাহাড়েরও। বুকিংয়ের হার তুলনামূলক ভাবে কম থাকলেও, ফ্লাইং ট্যুরিস্টরা দার্জিলিংয়ে পা রাখায় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়নি এখানকার পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল ব্যবসায়ীদের। কিছুটা হলেও পুজোর সপ্তাহে লাভের মুখ দেখেছেন। কিন্তু পুজো শেষ হতে না হতেই, যেভাবে পর্যটকরা সমতলের পথ ধরা শুরু করেছেন, তাতে চিন্তা বাড়ছে তাঁদের। চিন্তাটা দিওয়ালি নিয়ে। দার্জিলিং অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্রাভেলস এজেন্টের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ লামা বলছেন, ‘হোটেল বুকড হলে আমাদের গাড়িরও বুকিং হয়ে যায়। কিন্তু দিওয়ালির সময়ের জন্য এখন পর্যন্ত তেমন ভাবে কোনও হোটেলই গাড়ি বুক করেনি। ফলে চিন্তা তো কিছুটা থাকবেই।’ একই কথা শুনিয়েছেন তিস্তা-রঙ্গিত কার ড্রাইভার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রমেশ গাউলি।
দার্জিলিংয়ের থেকে গ্যাংটকের দূরত্ব যতটা, তেমনই এবছর পুজোর পর্যটনে তফাৎ ধরা পড়বে, তা পুজোর মুখেই স্পষ্ট হয়েছিল। সিকিমের হোটেল ব্যবসায়ী অভিজিৎ সেনগুপ্ত বলছেন, ‘পুজোর মুখে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে যান চলাচল শুরু হলেও, তার সুফল পাওয়া যায়নি। কেননা, রাস্তা খারাপ, পাহাড় বিপর্যস্ত -এধরণের প্রচার নিয়মিত চলেছে। বেড়াতে এসে আটকে পড়ার আশঙ্কায় অনেকেই পরিকল্পনা বাতিল করেছে।’ পেলিং, নামচির মতো কয়েকটি এলাকায় পুজোয় কিছুটা ভিড় হলেও বাকি এলাকায় একেবারেই ফাঁকা। তাই পাহাড় নিয়ে আপাতত দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। সিজেন টাইমে যদি এই অবস্থা হয়, তবে অন্য সময় কি হবে ? ভাবতেই শিউরে উঠছেন তারা। এই বছর পর্যটনের অবস্থা যে জায়গায় চলে গেল সেই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়াবে কবে পাহাড় সেটাই আপাতত জানা এবং বোঝার অপেক্ষায় পাহাড়ের মানুষ এবং পর্যটন ব্যবসায়ীরা।