আলোচনায় প্রস্তুত সরকারের সঙ্গে , তবে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা দিলেন একগুচ্ছ শর্ত
বেস্ট কলকাতা নিউজ : মঙ্গলবার স্বাস্থ্যসচিবের তরফে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব এসেছিল আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে। স্বাস্থ্যসচিবের তরফ থেকে ই-মেল মারফৎ আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল জুনিয়র ডাক্তারদের। কিন্তু সেই আলোচনার আমন্ত্রণ অপমানজনক মনে হয়েছিল বলে নবান্নে তাঁরা যাননি। অপেক্ষায় থেকে থেকে শেষপর্যন্ত নবান্ন ছেড়ে বেরিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার আন্দোলনকারীরা জানালেন তাঁরা আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।
আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে কিঞ্জল নন্দ বলেন, ‘‘আমাদের বলা হয়েছে ১০ জনের প্রতিনিধি দল নিয়ে দেখা করতে। কিন্তু আমাদের দাবি অন্তত ২৫ জন যাওয়ার অনুমতি দিতে হবে।’’ একই সঙ্গে তিনি আরও জানান, আলোচনায় বসলেই যে অবস্থান তুলে নেওয়া হবে তা নয়। দাবি পূরণের জন্য সরকার কী পদক্ষেপ করছে তা দেখার পরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাতভর স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধরনা-অবস্থান জারি রাখলেন প্রতিবাদী জুনিয়র ডাক্তাররা। রাতে আন্দোলনকারীদের অবস্থান বিক্ষোভে আসেন নির্যাতিতার পরিবার। আন্দোলনকারী ডাক্তারদের মাঝে এসে নির্যাতিতার মা বলেন, আমার ছেলেমেয়েরা আজ রাস্তায়, ‘তাই বাড়িতে থাকতে পারিনি, ছুটে এসেছি এখানে। প্রশাসন তোমাদের কোথায় দাঁড় করিয়েছে? মুখ্যমন্ত্রী উৎসবে যোগ দিতে বলছেন, আমার কাছে এটাই উৎসব।’
নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘আশা করছি প্রশাসনের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।’ আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা একটু ধৈর্য্য রাখো। তোমরা বাধ্য হয়েছ এই আন্দোলন করেছ। আশা করছি আমরা বিচার পাব।’ মঙ্গলবার রাতভর ধরনায় বসে থাকেন জুনিয়র ডাক্তাররা। রাতে তুমুল বৃষ্টি হয়। তাতেও মনোবলে চিড় ধরেনি হবু ডাক্তারদের। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন তাঁরা। স্থানীয় মানুষজন রাতে তাঁদের জন্য স্বেচ্ছায় খাবারের ব্যবস্থা করেন।
মঙ্গলবার বিকেল ৫ টার মধ্যে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফিরতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে সেই ডেডলাইন পার হয়ে গিয়েছে। জুনিয়র ডাক্তাররা কয়েক দফা দাবি নিয়ে সল্টলেক স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অনির্দিষ্টকালীন অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছেন। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে কড়া পুলিশি প্রহরার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য ভবনের মূল গেট। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে, স্পষ্ট করে দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
আরজি কর কাণ্ডে চাপ-পাল্টা চাপে তুমুল উত্তেজনা। জুনিয়র ডাক্তারদের ‘স্বাস্থ্য ভবন সাফাই অভিযান’ ঘিরে মঙ্গলবার দুপুরে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সল্টলেক স্বাস্থ্য ভবন চত্বরে। স্বাস্থ্য ভবনের ১০০ মিটার দূরে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিবাদ মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। আগে থেকে রাস্তায় ব্যারিকড করে রাখা হয়েছিল। পুলিশি বাধা পেয়ে রাস্তাতেই বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা। ৬ দফা দাবিতে অভিযান জারি রেখেছেন তাঁরা।
৬ দফা দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারদের স্বাস্থ্য ভবন সাফাই অভিযান। প্রতীকী মস্তিষ্ক হাতে এদিন মিছিলে হাঁটেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সল্টলেকের করুণাময়ী থেকে শুরু হয় মিছিল।
জুনিয়র ডাক্তারদের ৫ দফা দাবি:
আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় জড়িত সমস্ত দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করতে হবে। দ্রুত তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
তথ্য প্রমাণ লোপাটের সঙ্গে জড়িত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রত্যেককে দ্রুত চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে সার্বিক ব্যর্থতার দায় নিয়ে ইস্তফা দিতে হবে।
রাজ্যের সমস্ত মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সমস্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক-সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীদের সুরক্ষার দিকটি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।
একাধিক স্বাস্থ্যকর্তাকে পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে।
রাজ্যের সব মেডিকেল কলেজে গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, স্বাস্থ্য ভবনে এমন অনেকে রয়েছেন যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলিতে নানা দুর্নীতিতে সরাসরি মদত দিচ্ছেন বা দিয়েছেন। সেই সমস্ত স্বাস্থ্যকর্তাদের পদত্যাগ দাবি করেছেন তাঁরা। এদিন স্বাস্থ্য ভবন থেকে ১০০ মিটার দূরেই জুনিয়র চিকিৎসকদের মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। রাস্তায় বসে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন জুনিয়ার চিকিৎসকরা।