আসছে বোল্লা কালীপুজো, সেই উপলক্ষ্যে ফের সেজে উঠেছে গোটা বালুরঘাট শহর
বালুরঘাট : কার্তিক মাসের অমাবস্যায় শ্যামাপুজো। ঠিক তারপর থেকেই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাজুড়ে শুরু হয়ে যায় সাজোসাজো রব। এবার বোল্লামেলার কাউন্ট ডাউন শুরু। সারাবাংলার মানুষের আসা–যাওয়ার শুরু। জেলার পুজোটি আজ পরিচিতিতে গোটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মন জয় করে ফেলেছে। এবারে শিলিগুড়ি শহরের একটি পুজো প্যান্ডেল হয়েছিল বোল্লা মন্দিরের আদলে। প্রতিমা হয়েছিল বোল্লার প্রতিমার আদলে।
কী রহস্য বোল্লা রক্ষাকালী মাতার? একটা অখ্যাত গ্রামের মন্দির কোনও বৃহৎ পুঁজির লগ্নি ছাড়াই কীভাবে এত বিখ্যাত হয়ে উঠল- এটা রীতিমতো ভাবার বিষয়। মুখে মুখে ছড়িয়ে গেছে বোল্লা গোপন ইস্তাহারের মতো। রাসপূর্ণিমার পরের শুক্রবার বোল্লাপুজো- এ কথা ক্যালেন্ডারের পাতায় লেখা থাকে না। তবুও অগণিত মানুষ জেনে গিয়েছেন। পয়লা কার্তিক কাঠামোপুজোর মাধ্যমে বোল্লা গ্রামের ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে। তাই জেলাজুড়ে উৎসব উৎসব মেজাজ।
ওদিকে প্রতিমার খড় বাঁধা হয় এদিকে শুরু হয় মেলার প্রস্তুতি। মেলার দোকানের বাঁশের স্ট্রাকচার বাঁধা শুরুর লগ্ন থেকেই দোকানের ভাড়া শুরু হয়ে যায়। খাজা–বাতাসার দোকান, হরেকমালের দোকান, খাবারের দোকান, হোটেল, জামাকাপড়ের দোকান, গাছের নার্সারি, কৃষিকাজের সরঞ্জাম, কাঠের দোকানে আস্তে আস্তে সেজে ওঠে বোল্লামেলা। দিন যত এগিয়ে আসছে জেলাজুড়ে বোল্লামেলার উদ্দীপনার পারদ চড়ছে। সুযোগসুবিধা পেলেই মানুষ ঘুরতে চলে যাচ্ছেন বোল্লায়। কালীমূর্তিতে কাঁচা মাটির প্রলেপ পড়লেও জেলাময় সে খবর ছড়িয়ে পরে চায়ের দোকান থেকে সেলুনে। সেলুন থেকে হাটবাজারে। অপেক্ষায় থাকা মানুষগুলো বলাবলি করে ‘আর তো মাত্র ক’টা দিন!’
অনেক তর্কবিতর্ক শুরু হবে। এই যে এত ছাগবলি! তা নিয়ে চাপানউতোর চলবে। দিল্লি থেকে মানেকা গান্ধির এনজিও সক্রিয় হবে। ফোন আসবে জেলায় ‘কেন এই কাতারে কাতারে পশুবলি?’ প্রতিবার ওঠা প্রশ্ন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তৎপরতা, পশুপ্রেমী মানুষের সক্রিয়তা শেষপর্যন্ত কূলকিনারা পায় না। বোল্লায় প্রাঙ্গণ ছাগশিশুর রক্তে প্লাবিত হয়। এভাবেই নানা মানুষের নানা মতামতের মধ্যেই মেলার তিনদিন পার হয়ে যাবে।
বালুরঘাট গঙ্গারামপুরের হোটেলগুলিতে বাইরের মানুষের সমাগম ক্রমশ বাড়ছে। পুজো কমিটির অফিসও চরম ব্যস্ত। বাড়ছে পুলিশি তৎপরতা। এদিকে মেলার তিনদিন বোল্লা গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে অতিথি থাকবে। মেয়েজামাই আসবে। বোল্লা গ্রাম প্রস্তুত হচ্ছে অদ্ভুত মেলার জন্য। ‘অদ্ভুত’ কেননা এই মেলার চরিত্রের সঙ্গে অন্য কোনও মেলা তুলনীয় নয়। এখানে মানুষের স্রোত থেমে যায় না। কাতারে কাতারে মানুষ ঢোকে, দেবী প্রতিমা দর্শন করে পুজো দিয়ে আবার বেরিয়ে যাচ্ছে। কেউ এক জায়গায় দু’দণ্ডও দাঁড়ায় না। মানুষের স্রোত তাঁকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। এর মধ্যেই দ্রুত কেনাকাটা। একটা নির্দিষ্ট সময় যে পরিমাণ লোক মেলায় ঢোকেন, সেই পরিমাণ লোক বেরিয়েও যান। এই চিত্র সকাল সন্ধ্যা রাতদিনের প্রতিটি মুহূর্তের।