ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে মজুত তেল, দীর্ঘ লম্বা লাইন পাম্পে পাম্পে! ট্রাকচালকদের বিক্ষোভে কি অচল হবে ভারত? উঠছে এমন প্রশ্ন
বেস্ট কলকাতা নিউজ : দেশ জুড়ে পেট্রল পাম্পগুলিতে লম্বা লাইন। অনেকটা, জ্বালানির দাম বাড়তে পারে আশঙ্কায় যেই রকম লাইন পড়ে, সেই রকম। তবে, এবার লাইন দাম বাড়ার আশঙ্কা পড়েনি। উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, পাম্পগুলিতে আর তেল থাকবে কিনা, তাই নিয়েই। কারণ, পাম্পে জ্বালানি আনবে কারা? সংশোধিত ‘হিট অ্যান্ড রান’ আইন নিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ট্রাকচালকরা। যাদের মধ্যে রয়েছেন, তেলের ট্যাঙ্কার চালকরাও। এর ফলে, জ্বালানি তেলের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেওয়ার উপক্রম হয়েছে। এখনও সব জায়গায় তেল ফুরিয়ে যায়নি, তবে, ভারতের প্রায় সব ছোট বড় শহরেই জ্বালানি তেল কেনার চরম প্রবণতা চলছে তেল ফুরিয়ে যাওয়ার আতঙ্ক থেকেই।
উল্লেখ্য, হিট অ্যান্ড রান আইনে আগে যেখানে ২ বছরের জেলের বিধান ছিল, তা বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়েছে। সঙ্গে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানাও করা যেতে পারে। আর এরই প্রতিবাদে ৩ দিনের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন ট্রাকচালকরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন পাম্পে পাম্পে জ্বালানি সরবরাহকারী হাজার হাজার ট্যাঙ্কারের চালকরাও। বিক্ষোভের অংশ নিচ্ছেন একাংশের বাসচালকরাও। ট্যাঙ্কার-চালকরা বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় ইতিমধ্যেই ভারতের বেশ কয়েকটি জায়গায় জ্বালানী সংকট তৈর হয়েছে। মহারাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি জায়গায় কোনও পাম্পেই আর কোনও তেল নেই বলে খবর এসেছে। সামনের কয়েকদিনে, কলকাতা-সহ ভারতের অন্যান্য শহরেও এই জ্বালানি সংকট দেখা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পেট্রোল পাম্প ডিলাররা।
আর এই জ্বালানি সংকটের জেরে দেশের বিভিন্ন অংশেই পেট্রল পাম্পগুলিতে, মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি), লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে। নাগপুরের পেট্রল পাম্পে যে ছবি দেখা গিয়েছে, তেমনই ছবি দেখা গিয়েছে হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালাতেও। হিমাচলে ট্রাক ও বাস চালকদের ধর্মঘট ইতিমধ্যেই পর্যটন ক্ষেত্রে বড় আঘাত হেনেছে। স্থানীয় সংবাদ প্রতিবেদনগুলি অনুসারে, নয়া আইনের বিরুদ্ধে ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন ট্যাক্সি চালক ও পরিবহণ সংস্থাগুলির মালিকরাও। ফলে, ক্রিসমাস ও নিউ ইয়ারকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে আসা পর্যটকরা, বাড়ি ফেরার গাড়ি পেতে হয়রান হয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে, মধ্য প্রদেশের ভোপালে পরিবহণ ধর্মঘটের কারণে অফিস-কলেজে যেতে চূড়ান্ত অসুবিধার মুখে পড়েছেন নিত্যযাত্রীরা। ভোপালে বিভিন্ন অংশে রাস্তায় ট্রাক দাঁড় করিয়ে পথ অবরোধ করা হয়েছে। রাজস্থানেও জায়গায় জায়গায় পথ অবরোধ করেছেন ট্রাক-বাস-ট্যাক্সি চালক ও মালিকরা। অনেক জায়গায় পুলিশ বল প্রয়োগ করতে গেলে, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন আন্দোলনকারীরা।
পশ্চিমবঙ্গেও ধূলাগড়, ডানকুনি-সহ বিভিন্ন জায়গায় পথ অবরোধ করেছেন ট্রাকচালক ও বিভিন্ন পরিবহণ সংগঠনগুলি। কলকাতার বুকেও এদিন অনেক জায়গায় চলছে অবরোধ। বন্দর এলাকার রাম নগর মোড়, অ্যাসবেস্টর মোড়, শিখ লেন, সিজি আর রোড, হাইট রোডের মতো রাস্তাগুলি অবরোধ করেছেন বিক্ষুব্ধ ট্রাকচালকরা।
তবে, শুধু জ্বালানিই নয়, ট্রাক-চালকদের এই আন্দোলন যদি আরও দীর্ঘ হয়, সেই ক্ষেত্রে সামনের কয়েকদিনে নিত্য প্রয়োজনীয় আরও অনেক পণ্যেরই ঘাটতি দেখা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বাজারে বাজারে পণ্যগুলি পৌছে দেন ট্রাক-চালকরাই। ফলে চড়া মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়তে পারে। এমনটাই আশংকা করা হচ্ছে।