দুই ময়নার খুনসুটিতে ব্যাপল শোর গোল রসিক বিলে, পর্যটকরাও আসছেন এদের কার সাজি দেখতে

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

নিজস্ব সংবাদদাতা : রসিকবিল মিনি জু-তে বেড়াতে গিয়েছিলেন তুফানগঞ্জের দীপক বর্মন। এনক্লোজার ঘুরে দেখার সময় শুনতে পেলেন, কেউ যেন বলছে, ‘কাকু, এদিকে এসো!’। ঘাড় ঘুরিয়ে আশপাশে কাউকে দেখতে পেলেন না। খানিক বাদে ফের এক ডাক, ‘কাকু, এসো গল্প করি।’ এবার হকচকিয়ে গেলেন ভদ্রলোক। দিনেরবেলায় ভূতের উপদ্রব নাকি? ভালো করে এদিক-ওদিক তাকাতে দীপক বুঝলেন, খাঁচার ভেতর থেকে দুটো ময়না পাখি ডাকছে। ভুল ভাঙতেই মুখে চওড়া হাসি বছর পঞ্চাশের ওই ব্যক্তির মুখে। দুই ময়নার সঙ্গে খুনশুটি করতে তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের রসিকবিল মিনি জু-তে ভিড় বাড়ছে পর্যটকদের।

জেলা বন বিভাগের এডিএফও বিজনকুমার নাথ জানান, সম্প্রতি জেলা থেকে দুটি ময়না, তিনটি সান কুনুর সহ তিন প্রজাতির ২৩টি টিয়া উদ্ধার করা হয়েছিল। চিকিৎসকরা তাদের চার সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রেখেছিল। পাখিগুলো সম্পূর্ণ সুস্থ থাকায় তাদের রসিকবিল মিনি জু-তে নিয়ে আসা হয়েছে। তারজালির ঘেরাটোপে রাখা হয়েছে নতুন অতিথিদের।

মূলত বাম আমলে ২১০০ হেক্টরের বেশি জমি নিয়ে রসিকবিল প্রকৃতি পর্যটনকেন্দ্রটি গড়ে ওঠে। সেখানে রয়েছে চিতাবাঘ, চিতল হরিণ, ঘড়িয়াল, ময়ূর সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। শীতের মরশুমে পরিযায়ী পাখিরা রসিকবিলে ভিড় জমায়। এবছর সেগুলোর পাশাপাশি পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রও রয়েছে ওই দুই ময়না পাখি।

তবে খুব বেশিদিন হয়নি ময়না পাখি দুটি এসেছে। তাদের নামও রাখা হয়নি। কয়েকদিনের মধ্যেই নাম রাখা হবে। কেউ নাম জিজ্ঞাসা করলে বলছে, ‘আমার নাম ময়না, তোমার নাম কী?’ পর্যটকদের সঙ্গে গল্পে মশগুল দুই ময়নাই। কেউ তাদের কাকু, কেউ আবার দাদা। তাদের খাঁচার সামনে না দাঁড়ালে ‘এসো, গল্প করি’ বলে ডেকে নিচ্ছে। ভিড় জমলে আবার স্লোগান উঠছে, ‘কাকু, গো ব্যাক’। খিদে পেলে বনকর্মীরা শুনছেন ‘কাকু, ভাত দাও, খিদে পেয়েছে’।

পাখি দুটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা বনকর্মীরা জানিয়েছেন, খাবার দিতে খানিকটা দেরি হলেই নালিশ করছে। আবার সকাল-সন্ধ্যায় পর্যটক না থাকলে মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এদিন রসিকবিলে বেড়াতে যান কামাখ্যাগুড়ির বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী রাজেশ দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘ডানার নিম্নচাপে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির জন্য ব্যবসা কার্যত লাটে। তাই এই সুযোগে পরিবারকে নিয়ে রসিকবিলে ঘুরতে এসেছি। কিন্তু দুই ময়না পাখির সঙ্গে কথা বলার পর ছেলে এখন বাড়ি যেতে চায়না। এই দুই ময়নার গল্প এখন গোটা উত্তরবঙ্গে ছড়িয়ে গেছে। এদিকে মানুষজন ও আসছেন এই দুই ময়নার কার সাজি দেখতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *