বঙ্গতনয়ের এক বিরাট সাফল্য হাজারো ‘বাধা বিপত্তি ‘ দূরে সরিয়ে! অবশেষে এই কৃষক সন্তান পৌঁছলো শ্রেষ্ঠত্বের শিখরে
বেস্ট কলকাতা নিউজ : লক্ষ্যে অবিচল থাকলে সফলতা মিলবেই! এ যে নিছক কথার কথা নয়, তা বাস্তবে প্রমাণ করে দেখালেন পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের পাণ্ডুক গ্রামের বিল্টু মাজি । একবার ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় বসে বিল্টু ৩ নম্বরের জন্য প্রাথমিক স্তরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। তারপর সরাসরি ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসার জন্য মনস্থির করেন। দু- দু’বার অল্প নম্বরের জন্য তিনি আটকে গিয়েছিলেন। তবে হাল ছাড়েননি বিল্টু। তিন বারের চেষ্টায় বিল্টু সর্বভারতীয় ইণ্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। শুধু উত্তীর্ণ হওয়াই নয়, মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন তিনি। প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে বিল্টু মাজির এই সাফল্যে গর্বিত এলাকাবাসী।
আউশগ্রামের পাণ্ডুক গ্রামের প্রান্তিক কৃষক জয়দেব মাজি এবং সুমিত্রাদেবীর এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ছোট বিল্টু। পাণ্ডুক প্রাথমিক বিদ্যালয়েই তাঁর পড়াশোনার জীবন শুর হয়। এরপর তিনি পাণ্ডুকের পিপিডি হাইস্কুল থেকে পড়াশোনা করে ২০১৫ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন। একাদশ শ্রেণিতে পড়ার জন্য বিশ্বভারতীতে বিল্টু ভর্তি হন। সেখান থেকে স্ট্যাটিসটিক্স বিষয়ে অনার্স নিয়ে তিনি বিএসসি পাশ করেন। বিল্টু জানিয়েছেন, তাঁর MSC করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু পারিবারিক পরিস্থিতির কারণে তাঁকে চাকরি খুঁজতে হয়। কারণ তাঁদের মাত্র বিঘা দু’য়েক জমির আয়ের উপর ভরসা করেই পরিবার চলত। বাবাকে ঋণ নিয়ে দিদির বিয়ে দিতে হয়েছিল। ওই ঋণের ‘সুদ’ মেটানোর পর আর সংসার চালানোর মত সঙ্গতি থাকত না।
বিল্টু মাজির কথা অনুযায়ী পরিবারের মুখ চেয়ে ২০২০ সালে বিএসসি পাশ করার ওই বছরের শেষের দিকে তিনি গ্রামীণ পোষ্ট অফিসে শাখা পোষ্ট মাষ্টার হিসাবে কাজে যোগ দেন। এখন বীরভূম জেলার রূপপুর গ্রামের পোষ্ট অফিসে কর্মরত তিনি। তবে চাকরি করলেও প্রশাসনিক অন্যান্য পরীক্ষায় বসার জন্য প্রস্তুতিও নেওয়াও তিনি চালিয়ে যান। বিল্টু জানান, ২০২১ সালে প্রথম ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় বসার পর প্রি-পরীক্ষায় ৩ নম্বরের জন্য তিনি আটকে যান। তারপর আর ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় বসার চেষ্টা তিনি করেননি। এর পরিবর্তে সরাসরি UPSC পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন তিনি। ২০২২ সালে প্রথম আইএসএস পরীক্ষায় বসেন তিনি। ওই বছর প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও মৌখিক পরীক্ষায় তিনি আটকে যান। স্কোর কার্ড অনুযায়ী তাঁর ১৬ নম্বর কম হয়। ২০২৩ সালে আবার তিনি একই পরীক্ষা দেন। ওই বছরেও জেনারেল ক্যাটাগরিতে তাঁর ২ নম্বর কম হয়। বিল্টুর কথায়, “দ্বিতীয়বার ২ নম্বরের জন্য আটকে যান লিখিত পরীক্ষায়। এরপর তাঁর জেদ আরও চেপে বসে। মাও প্রেরণা জুগিয়ে যান। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত হাল ছেড়ো না। স্বামীজীর সেই বাণীকে পাথেয় করে সফলতা লাভের প্রচেষ্টা চালিয়ে চান। অবশেষে সফলতা পানও তিনি।”