সন্ধ্যা নামলেই নেমে আসে চরম আতঙ্ক, ঠাকুর দেখার কথা ভাবতেও পারে না এই গ্রামের মানুষজন
বেস্ট কলকাতা নিউজ : সন্ধ্যা নামলেই গ্রামে হানা দেয় বন্য জন্তু। গ্রামের একপাশে রয়েছে জঙ্গল আর অন্য পাশে চা বাগান। এরই মাঝে রয়েছে তোতাপারা বনবস্তি। সেখানেই হয়েছে পুজোর আয়োজন।তোতাপাড়া বনবস্তিতে হাতির হামলা প্রায় প্রতিদিনের ঘটনা। সন্ধ্যা নামলেই চা বাগানের রাস্তায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় চিতা বাঘ। তাই আতঙ্কে সিঁটিয়ে থাকতে হয় গোটা গ্রামের মানুষকে। আর সেই কারণে শহরের পূজা দেখার ইচ্ছে থাকলেও উপায় হয় না তাঁদের। তাই নিজেদের বন বস্তিতে পূজোর আয়োজন। ডুয়ার্সের মরাঘাট রেঞ্জের অন্তর্গত তোতাপাড়া জঙ্গলের বুক চিরে চলে গিয়েছে রাস্তা। প্রায় ৮ কিলোমিটার জঙ্গলের পথ পেরিয়ে যেতে হয় তোতাপাড়া বনবস্তিতে। সেখানে দুর্গা পূজিত হয় বনদুর্গা হিসেবে। শুরু থেকেই জাঁকজমক করেই পূজা এবং মেলা দুটোই হয়ে আসছে তোতাপাড়া বস্তিতে। কিন্তু চরম আর্থিক সমস্যায় সেই পুজো আজ জৌলুস হারাতে বসেছে।
তোতাপাড়া বনবস্তির বাসিন্দাদের আর্থিক কষ্ট তো রয়েছেই, তারপর বেঁচে থাকার তাগিদে প্রতিদিন দিনের আলোয় হাড় ভাঙা খাটুনি। আর রাতে বন্য হাতিদের হামলার আতঙ্ক। এরপরেও সব অভাব, দুঃখ ম্লান করে পুজোর আনন্দে মেতে ওঠেন বনবস্তির বাসিন্দারা। ডুয়ার্সের গয়েরকাটা থেকে নাথুয়াহাট রাস্তায় খট্টিমারি বিট অফিস। সেখান থেকে ডান দিকে ঘন জঙ্গলের বুক চিরে যাওয়া কাঁচা রাস্তা দিয়ে গেলে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে তোতাপাড়া বিট অফিস। সেখান থেরে কিছুটা দূরেই রয়েছে বন দফতরের কমিউনিটি হল।
এখানে নেই কোনও মণ্ডপ, নেই আলোর রোশনাই। রীতা রাভা, বুধুয়া ওরকো, রিমা ওড়াঁওরা কচি-কাঁচাদের নিয়ে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই জড় হয় মন্দিরে। গোটা বনবস্তির মানুষ অপেক্ষা করে থাকে এই দিনটির জন্য। সারা বছর ব্যস্ততায় থাকলেও পুজোর ওই ৬-৭ টা দিন তাঁরা আনন্দে মেতে উঠেন। প্রায় ১৪ বছর আগে তৎকালীন বনাধিকারিক কল্যাণ দাসের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই বন দুর্গাপুজো। তবে শহরে পুজো দেখতে যাওয়ার উপায় নেই। বনবস্তি থেকে গয়েরকাটা শহরের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। অন্যদিকে ধূপগুড়ি শহরের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। তার মধ্যে জঙ্গলের রাস্তা ধরেই যেতে হয়।
এলাকার বাসিন্দা রিমা ওরাও বলেন, “পুজোর সময় ধান পাকে বলে হাতির আনাগোনা অনেকটাই বেড়ে যায়। চা বাগানের নালায় থাকে চিতাবাঘ। তারাও দিন ফুরলেই শিকারে বেরিয়ে পড়ে। তাই পুজো মানে ওই দিনের বেলাতেই যা আনন্দ। রাতে বাইরে থাকাটা নিরাপদ নয়।”পুজোর অন্যতম কর্মকর্তা তথা স্থানীয় বাসিন্দা সুরেশ মিঞ্জ বলেন, একটা সময় ছিল যখন বাইরে যেতে হবে বলে এখানকার অনেকেই পুজো দেখার সুযোগ পেত না। এখন অন্তত দিনের বেলায় আনন্দ করার সুযোগ পাওয়া যায়।
মোরাঘাট রেঞ্জে নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন রেঞ্জ অফিসার চন্দন ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, পুজো প্রস্তুতি নিয়ে তোতাপাড়ার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনাও শুরু হয়েছে। শুধু তোতাপাড়া নয়, জঙ্গলের রাভা বস্তি, খুংলুং বস্তির বাসিন্দাও সামিল হয় মণ্ডপে। পুজোর কয়েকদিন বাসিন্দারা মণ্ডপেই পড়ে থাকেন তাঁরা। চলে নাচ-গান। দু’বেলাই চলে প্রসাদ খাওয়া। মন্দিরের পাশেই বসে ছোট মেলা।