সূর্য ওঠার আগে রোজ কালীপুজো সম্পন্ন হয় সতীর ৫১ পীঠের এক পীঠ ময়নাগুড়ির এই মন্দিরে
জলপাইগুড়ি : সতীর ৫১ পীঠের এক পীঠ ময়নাগুড়ি জল্পেশের ভ্রামরী মন্দির । কালিকা পুরাণ অনুযায়ী, এই জায়গায় সতীর বাঁ পায়ের অংশ পড়েছিল৷ এছাড়াও ডুয়ার্স সম্পর্কিত বিভিন্ন বইয়ে মন্দিরের ঐতিহাসিক বৃত্তান্ত আলোচিত হয়েছে। ঐতিহাসিকদের একাংশের মতে, প্রায় ১২০০ বছর আগে কালাপাহাড় রাজা নিজ ধর্ম ছেড়ে অন্য ধর্মগ্রহণ করার পর বিভিন্ন মন্দির ধ্বংস করেন৷ সেসময় এই মন্দিরটিও ধ্বংস করা হয়। আবার একাংশের মতে, ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বক্তিয়ার খিলজি ভুটান ও অসম জয় করবার উদ্দেশ্যে এই এলাকায় আসেন৷ সেসময় তিনি এই অঞ্চলের সব পাথরের মন্দির ধ্বংস করেন৷ তখন জল্পেশ মন্দিরের সঙ্গে এই মন্দিরটিও ধ্বংস করা হয়।
তবে ইতিহাস যাই বলুক, মন্দিরের নামটি কিন্তু হয়েছে এখানকার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে। বেশ কিছু বছর আগে মন্দির লাগোয়া এই জায়গায় ছিল গভীর জঙ্গল৷ জঙ্গলের এই জায়গায় ভ্রমর অর্থাৎ ভোমরার আধিক্য ছিল। সেই থেকেই মন্দিরের নাম হয় ‘ভ্রামরী’। এই ভ্রামরী মন্দির ওই এলাকায় আবার সিদ্ধেশ্বরী মন্দির নামেও পরিচিত। অনেকের মতে, সিদ্ধিলাভের আশায় বহু সাধক এই মন্দিরে আসতেন এবং সিদ্ধিলাভ করতেন। তাই এই মন্দিরের এই নাম।
বর্তমানে টিনের চাল দেওয়া ঘরের মধ্যে কষ্টিপাথরের তৈরি কালীমূর্তিটি রয়েছে। জল্পেশ মন্দির থেকে ১০০ গজ দূরে অবস্থিত এই মন্দিরে প্রতিদিন ভোর ৪টায় সূর্য ওঠার আগে পুজো করা হয়৷ সূর্য ওঠার আগে এই মন্দিরের পুজো করা ফুল নিয়ে গিয়ে জল্পেশের মূল মন্দিরের গর্ভগৃহে শিবঠাকুরের পুজো করা হয়৷ এরপর সারাদিনব্যাপী পর্যায়ক্রমে পুজো চলতেই থাকে। এদিকে পুরোহিত সমরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই দেবীর পুজোর নিয়মও আলাদা। কালীপুজোর রাতে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে কালীপুজো হয়ে থাকে।’
মূলত প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে বিশেষ পুজোর আয়োজন হয়৷ তবে কালীপুজোর দিনে পুজোর আয়োজন সব থেকে আলাদা। ওই দিন আশপাশের এলাকার বহু মানুষ মন্দিরে ভিড় জমান। জল্পেশ মন্দিরের স্থানীয় বাসিন্দা তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এবছরও নিষ্ঠাসহকারে পুজো হবে কালীপুজোর দিন। তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।’
ময়নাগুড়ি জল্পেশ এলাকার এই ভ্রামরী মন্দির ও মন্দিরের ভেতর দেবতারূপী প্রস্তরখণ্ডকে ঘিরে এলাকায় নানান মতবাদ প্রচলিত রয়েছে। তবে তার থেকেও বেশি রয়েছে মন্দিরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব। মন্দিরে গেলে তার আশপাশে সেই নিদর্শনের ছাপ স্পষ্ট লক্ষ করা যায়৷ ধ্বংস হওয়ার পরবর্তীতে জল্পেশ মন্দির নতুনভাবে নির্মাণ করা হলেও এই ভ্রামরী মন্দির আর নির্মাণ হয়নি। সেই থেকে জরাজীর্ণ অবস্থাতেই রয়েছে গোটা মন্দির। ধ্বংসপ্রাপ্ত বিভিন্ন অংশও মন্দিরের আশপাশেই রয়েছে৷ জল্পেশ ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক গিরীন্দ্রনাথ দেব জানান, ভ্রামরী মন্দিরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে যথেষ্টই।