পা পিষে গিয়েছিল বাসের চাকায়, এই পুলিশ অফিসার আজও ডিউটি করছেন নকল পা নিয়ে
বেস্ট কলকাতা নিউজ : নকল পা নিয়ে কলকাতার ট্রাফিকের দেখাশোনা করছেন একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট। মনে অদম্য জেদ। মারাত্মক দুর্ঘটনা তাকে বিন্দুমাত্র দমাতে পারেনি। নকল পা লাগিয়ে সারাদিন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছেন নিজের দায়িত্ব। এনাকে দেখলে, বিন্দুমাত্র বোঝা যাবে না একটা পা নকল। কৃত্রিম পা নিয়ে ডিউটি করছেন, এমন পুলিশ অফিসার ভারতে বিরল। এত মনের জোর তিনি কোথায় পেলেন? টানা চার মাস শুয়ে ছিলেন হাসপাতালের বিছানায়। তখনই ঠিক করে নিয়েছিলেন, জীবনে আর যাই হোক হেরে যাবেন না। ছোটবেলার স্বপ্ন সফল করেছিলেন নিজের পরিশ্রমে। সেই স্বপ্নকে তিনি কিভাবে হারাতে দিতেন? তার পাশে ছিল কলকাতা পুলিশ।
নাম সুদীপ রায়। ২০১৪ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে তিনি কলকাতা পুলিশের যোগদান করেন। সফল হয় স্বপ্ন। ২০১৭ সালে ৭ই জুন ডাফরিন রোডে ডিউটির সময় পায়ের উপর দিয়ে চলে গিয়েছিল বেপরোয়া বাস। থেঁতলে গিয়েছিল পা। তীব্র যন্ত্রণায় অজ্ঞান হয়ে যান। দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। দুবার অপারেশন করেও বিপদ কাটেনি। অবশেষে একটা পা বাদ দিতে হয়। পুরো পরিবারের উপর আকাশ ভেঙে পড়ে। এই দুর্ঘটনা তার কাছে সামান্য ছিল না, আর সেখান থেকে ওভারকাম করার লড়াইটাও ছিল দীর্ঘ। হাসপাতালে বিছানায় শুয়ে থাকতে হয় টানা চার মাস। প্রাণে বেঁচে গেলেও তার ডান পাটা কিছুতেই রাখা যায়নি। যদিও তিনি ভেঙে পড়েননি। অপারেশনের পর কাজে ফেরার জন্য নতুন করে প্রস্তুতি শুরু করে দেন। তার পাশে থেকেছে তার পরিবার। বিশেষ করে অপর এক অফিসার জয়ন্ত রায়। তাকে দাদার মতো সাহস জুগিয়েছেন। সুদীপ রায়ের মনের জোর দেখে কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করে কলকাতা পুলিশ। সেই চিকিৎসার খরচও বহন করে কলকাতা পুলিশ। অপারেশন করে কৃত্রিম পা বসানো হয় সুদীপের। তারপর শুরু হয়ে স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই।
এখন কৃত্রিম পা নিয়ে সুদীপ রায় দিব্যি ডিউটি করছেন। শুধু তাই নয়, বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে তিনি বাজার যান। মোটরসাইকেল চালিয়ে ছেলেকে ঘুরতে নিয়ে যান। কখনো বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাতে হাতে তুলে নেন ক্রিকেট ব্যাট। এই অফিসার অতীতের ঘটনা মনে রাখতে চান না। ডিপ্রেশন নয়, দুর্নিবার সাহস আর অদম্য জেদ তাকে পুনরায় কাজের জগতে ফিরিয়ে এনেছে। এমন মানুষকে স্যালুট না জানিয়ে সত্যি পারা যায় না। এনাদের মতো নিষ্ঠাবান অফিসারদের জন্যই আজ দেশ সুরক্ষিত।