অবশেষে তৃণমূলের না-ছুঁই পানি অবস্থা মহুয়া মৈত্রের লড়াইয়ে, দলে কতখানি গুরুত্ব কৃষ্ণনগরের সাংসদের, তা নিয়ে শুরু জল্পনা
বেস্ট কলকাতা নিউজ : ‘ক্যাশ ফর কোয়ারি’ বিতর্কে বিজেপি শিবিরের টানা আক্রমণের মুখে মহুয়া মৈত্র। লোকসভার এথিক্স কমিটি তাঁর সাংসদ পদ খারিজের সুপারিশ করেছে। এথিক্স কমিটির সুপারিশের ‘ক্ষমতা’ কতদূর, তা নিয়েও চর্চা চলছে। এদিকে এথিক্স কমিটির সুপারিশের পর মহুয়া যেন আরও আক্রমণাত্মক। যদি এথিক্স কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে তাঁর সাংসদ পদ যায়, তাহলে আরও বড় জনমত নিয়ে তিনি লোকসভায় ফিরবেন বলে হুঙ্কার দিয়ে রেখেছেন।
নিজের লড়াই, নিজেই লড়বেন মহুয়া’ :মহুয়া-ইস্যুতে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে অভিষেক মুখ খুলেছেন গতকালই। পুরোটাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে ব্যাখ্যা করলেও অভিষেক জানিয়ে দিয়েছেন, মহুয়া নিজের লড়াই নিজে লড়ে নেবেন। মহুয়া-ইস্যুতে দলের অবস্থান এখান থেকেই অনেকটা স্পষ্ট। যখন দল বলছে, নিজের লড়াই নিজেকে লড়তে হবে… তখনও ফ্রন্টফুটেই ছক্কা হাঁকাচ্ছেন মহুয়া। বহিষ্কার করা হলে আরও বড় জনমত নিয়ে লোকসভায় পা রাখবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
ব্যক্তিগত মন্তব্য থেকে দূরত্ব দলের : একাধিকবার একাধিক মন্তব্যের জন্য বিতর্কে জড়িয়েছেন মহুয়া। অধুনা ক্যাশ ফর কোয়ারি বিতর্কে দল বলে দিয়েছে, নিজের লড়াই নিজেই লড়বেন মহুয়া। তার আগে কালী-বিতর্কেও সাবধানী অবস্থান ছিল তৃণমূলের। মহুয়ার মন্তব্যে যে সমর্থন নেই দলের, তা স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে মহুয়া তখনও নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন। ‘দু’ পয়সার সাংবাদিক’ মন্তব্য ঘিরেও বিতর্কের জলঘোলা কম হয়নি। সেই সময়েও অস্বস্তি কাটাতে ক্ষমা চেয়েছিলেন বটে মহুয়া। তবে তখনও পিছু হটেননি তিনি। সোশ্যাল হ্যান্ডেলে লিখেছিলেন, ‘আই অ্যাপোলোজাইজ ফর দ্য মিন হার্টফুল অ্যাকিউরেট থিংস আই সেড।’
দল সাবধানী, তবে মহুয়ার ঝাঁঝ একইরকম : লোকসভায় বিভিন্ন সময়ে বিজেপির উদ্দেশে ঝাঁঝালো আক্রমণ শানিয়েছেন মহুয়া। কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি ফেলেছেন কেন্দ্রকে। বক্তব্য রাখার সময় অনর্গল ইংরেজি, নিজস্ব স্টাইলে তথ্য-পরিসংখ্যান তুলে ধরে বার বার অস্বস্তিতে ফেলেছেন কেন্দ্রকে। বিরোধী পরিসরে সংসদীয় রাজনীতিতে মহুয়ার ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট চর্চাও হয়। সাম্প্রতিক এই বিতর্কে দল যখন সাবধানী অবস্থান নিচ্ছে, তখনও একইরকম ঝাঁঝ মহুয়ার গলায়। যাঁরা মহুয়ার রাজনৈতিক জীবন কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁদের অবশ্য ব্যাখ্য়া এটাই মহুয়ার স্টাইল।
জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের ভরসার পাত্র মহুয়া: জাতীয় রাজনীতির পরিসরে দলও বার বার ভরসা রেখেছে মহুয়ার উপর। গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে মহুয়াকে দলের গোয়া ইউনিটের ইনচার্জ করেন মমতা। রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, অনর্গল ইংরিজি কথা বলার দক্ষতা ছিল এর অন্যতম কারণ। এনআরসি আন্দোলনের সময় তৃণমূলের সংসদীয় এবং পরিষদীয় দলেও ছিলেন মহুয়া। অসমের শিলচর বিমানবন্দরে অসম পুলিশের বাধার মুখে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন মহুয়া। তাঁর বিরুদ্ধে অসম পুলিশের এক মহিলা কনস্টেবলকে আহত করার অভিযোগে এফআইআর পর্যন্ত দায়ের করেছিল অসম পুলিশ।
প্লাস পয়েন্ট বিধায়ক মহুয়ার ইমেজ : সাংসদ হওয়ার আগে থেকেই জেলার রাজনীতিতে বেশ পোক্ত জায়গা করে নিয়েছেন মহুয়া। কৃষ্ণনগরের সাংসদ হওয়ার আগে তিনি ছিলেন করিমপুরের বিধায়ক। বিধায়ক মহুয়াও নিজের বিধানসভা এলাকায় যথেষ্ট সময় দিতেন। প্রথম বার বিধায়ক হওয়ার পর বিধানসভায় মাঝে মাঝেই মহুয়া বক্তব্য পেশ করার সময় সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। অর্থনীতিক বিষয়ে আলোচনা হলে বিধায়ক মহুয়া যথেষ্ট তথ্য হাতে নিয়ে বক্তব্য পেশ করতেন। এবিষয়ে মহুয়া তখনকার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং সিনিয়র মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের যথেষ্ট সায় এবং সহযোগিতা পেতেন। বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে তথ্য এবং ঘটনা উদ্ধৃত করে বিধানসভায় বক্তব্য পেশ করতেন মহুয়া। ইংরেজি শব্দের ব্যবহার করতেন ঘন ঘন। সূত্রের খবর, আড়ালে আবডালে এসব নিয়ে বেশ চর্চাও করতেন তাঁর দলীয় সতীর্থরা।
দলের অন্দরে নালিশও রয়েছে মহুয়ার বিরুদ্ধে : বিরোধীদের ঝাঁঝালো আক্রমণ, এলাকায় সময় দেওয়া… আরও অনেক প্লাস পয়েন্ট থাকলেও, কানাঘুষো শোনা যায় মহুয়ার মেজাজ নিয়ে দলের অন্দরে বেশ চর্চা রয়েছে। মহুয়া নাকি কর্পোরেট স্টাইলে নির্দেশ দেন, এই নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল দলের অন্দরে। এমনকী এমন অভিযোগও রয়েছে, কৃষ্ণনগরের সাংসদ হয়ে যাওয়ার পরেও নাকি নিজের পুরনো বিধানসভা কেন্দ্র করিমপুরের কাজে নাক গলাতেন তিনি। একবার তো দলীয় মঞ্চ থেকেই দলনেত্রী মহুয়াকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, নিজের এলাকায় কাজ করতে। করিমপুর নিয়ে না ভাবার জন্য বলেছিলেন নেত্রী।