“জলে ভাসে ইট, স্তম্ভ থেকে ভেসে আসে সুর”, কোথায় অবস্থান করছে এই অলৌকিক শিব মন্দির , জেনে নিন
বেস্ট কলকাতা নিউজ : ভারতে মন্দিরের অভাব নেই। বিভিন্ন ধর্মের পীঠস্থান এই দেশ। প্রচুর অদ্ভুত সব মন্দির রয়েছে এই দেশে। তার মধ্যে কাকাতিয়া রুদ্রেশ্বর মন্দির অন্যতম। এই মন্দিরটি রামপ্পা মন্দির নামেও পরিচিত। ভগবান শিবই মূলত পুজিত হন এখানে। এটি অবস্থিত রয়েছে বর্তমান তেলাঙ্গানা রাজ্যে। তবে আপনি জানেন কি এই মন্দিরের অলৌকিক ইতিহাস সম্পর্কে ?
১২১৩ খ্রীষ্টাব্দে মন্দিরটির নির্মাণ হয়েছিল। মন্দিরটিকে তৎকালীন সময়ের চমৎকার একটি দৃষ্টান্ত বলে মনে করা হয়। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায়ও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে মন্দিরটি। জানা যায়, মন্দিরটি তৈরি হতে প্রায় চল্লিশ বছর লেগে গিয়েছিল। বিখ্যাত ভাস্কর্য শিল্পী রামাপ্পা এই মন্দিরের প্রধান স্থপতি ছিলেন। মূল তাঁর নামেই এই মন্দিরের নামকরণ করা হয়েছে।
মন্দির নির্মাণে বেলেপাথর,গ্রানাইট,ডলেরাইট ও চুন ব্যবহার করা হয়েছে। মন্দিরটি তার জটিল খোদাই ও নকশার জন্য বিখ্যাত। তার উদাহরণ জ্বলজ্বল করছে এর দেওয়াল, স্তম্ভ এবং ছাদে।
কাকাতিয়া রুদ্রেশ্বর মন্দিরের অলৌকিক গুণ:
১.ভাসমান ইট: মন্দিরের শিখরা বা গোপুরম খুব বিশেষ ইট দিয়ে তৈরি। এই ইট এতই হালকা যে জলের উপর ভাসতে পারে। ওজন ০.৮৫ থেকে ০.৯ গ্রাম/সিসি, যা জলের ঘনত্বের চেয়ে কম (১ গ্রাম/সিসি)ও কম। এই ইটগুলি বাবলা কাঠ, ভুসি এবং মাইরোবালান (একটি ফল) এর কাদামাটি মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। এগুলিকে একটি স্পঞ্জের মতো করে।যার কারণে এই ইটগুলি জলে ভাসতে থাকে।
২.সঙ্গীত স্তম্ভ: মন্দিরের স্তম্ভগুলিতে সুন্দর নকশা রয়েছে। একটি স্তম্ভের উপর শ্রীকৃষ্ণের মূর্তি রয়েছে। তাঁকে একটি গাছের উপর বসে বাঁশি বাজাতে দেখা যায়। এই চিত্র মনে করায়, কৃষ্ণ যখন মজার ছলে গোপিদের বস্ত্র লুকিয়ে রেখেছিল সেই কথাকে। এছাড়াও সঙ্গীতের সপ্তস্বর (সা,রে গা, মা, পা, ধা এবং নি) আঁকা রয়েছে। ভগবানের মূর্তির উপর টোকা দিলে বেজে ওঠে সেই সুর।
৩.অপটিক্যাল ইলিউশন: মন্দিরে একটি অলৌকিক নকশা রয়েছে। যেখানে তিনজন নর্তকী নাচ করছেন। কিন্তু তাদের মাত্র চারটি পা। আপনি যদি মাঝখানের নর্তকীকে হাত দিয়ে চেপে বন্ধ করেন, তাহলে আপনি দুটি মেয়েকে নাচতে দেখবেন। তবে আপনি যখন দুপাশে মেয়েদের হাত দিয়ে ঢাকা দেবেন,তখন মাঝের পাগুলি নর্তকের (পুরুষের) পা হয়ে যায়।
৪.গর্ভগৃহে আলো পৌঁছায়: মন্দিরের প্রধান দেবতা হলেন শিব। সূর্যের আলো গর্ভগৃহের চারটি গ্রানাইট স্তম্ভ দ্বারা প্রতিফলিত হয়। যা অভ্যন্তরীণ গর্ভগৃহের দিকে মোড় নেয়, এটি সারা দিন আলোকিত করে তোলে
৫.নেকলেসের ছায়া: মন্দিরের স্তম্ভে মন্দাকিনীর বারোটি কালো পাথরের মূর্তি রয়েছে। যাঁরা নৃত্য করছে। প্রতিটি আকৃতির আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কাজটি এতটাই জটিল যে একজন মন্দাকিনীর উপর তার পরনের নেকলেসটির একটি ছায়া রয়েছে। যা দেখতে প্রাকৃতিক হলেও বাস্তবে খোদাই করা।
৬.১৩টি ছোট গর্ত: একটি স্তম্ভের উপর একটি সূক্ষ্ম খোদাই করা আছে। যার আকৃতি একটি চুড়ির মতো। এটিতে ১৩টি ছিদ্র রয়েছে। শুধুমাত্র একটি ছোট সুতো প্রতিমার গর্তের মধ্য দিয়ে যেতে পারে। তেরো শতকে এটি খোদাই করার জন্য কোন নির্দিষ্ট সরঞ্জাম ছিল তা স্পষ্ট নয়।
৭.ভূমিকম্প প্রতিরোধী: এই মন্দিরটি তার ভূমিকম্প প্রতিরোধী স্থাপত্যের জন্যও পরিচিত। মন্দির নির্মাণে স্যান্ড বক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। যার কারণে এটি অলৌকিকভাবে ভূমিকম্পের তরঙ্গ শোষণ করতে পারে।