ভরদুপুরে প্রকাশ্য রাস্তায় গুলির লড়াই, ভাবলেশহীন ভাবে রোজনামচায় ফিরেছেন বিরাট এক কৃতিত্বের পরও

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : ভরদুপুরে প্রকাশ্য রাস্তায় গুলির লড়াই চলছে। একদিকে সাত বেপরোয়া রিভলভারধারী। অন্যদিকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে একজন। যেন কোনও সিনেমার দৃশ্য! অনেকেই খবরটা সংবাদমাধ্যমে দেখেছেন, পড়েছেন।। দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ রানিগঞ্জের তারবাংলা এলাকায় সোনার দোকানে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে সাত অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। হেলমেট আর গামছায় তাদের মাথা-মুখ ঢাকা ছিল। হাতে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। মুখে হুমকি আর অশ্রাব্য গালিগালাজ দিচ্ছিল ওই দুষ্কৃতীরা। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে দোকান থেকে চার কোটি টাকারও বেশি মূল্যের গয়না নিয়ে তারা কেটে পড়ার তাল করে। বাইকে ওঠার আগে সাদা কাপড়ের ব্যাগে পুরে নেয় লুটের মাল। কিন্তু, তাদের হাওয়া হয়ে যাওয়া আটকে দেন জামুরিয়ার শ্রীপুর পুলিশ আউটপোস্টের ওসি, সাব-ইন্সপেক্টর মেঘনাদ মণ্ডল।

ঘটনাস্থলের ঢিলছোঁড়া দূরত্বে অন্য দোকানে তিনি ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলেন। সাদা পোশাকে ছিলেন। লোকজনের ভীত-সন্ত্রস্ত চোখমুখ, ইতস্তত ছোটাছুটি দেখে তিনি বুঝতে পারেন, সোনার দোকানে কোনও গোলমাল হচ্ছে। দোকানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথেই বের করে ফেলেন কোমরে থাকা সার্ভিস রিভলভার। দাঁড়িয়ে পড়েন দোকানের কাছেই মাত্র ইঞ্চি ছয়েক চওড়া বিদ্যুতের খুঁটির আড়ালে।

তা দেখে, দোকানের বাইরে পাহারায় থাকা এক ডাকাত বুঝে ফেলে, নিরাপদে পালানো মুশকিল হবে। ভিতরে সঙ্গীদের হুঁশিয়ার করে সে রিভলভার বের করে। গুলিবর্ষণ করতে করতে দোকান থেকে বেরিয়ে আসে ছয় দুষ্কৃতী। তাদের লক্ষ্য করে পালটা গুলি চালান মেঘনাদ মণ্ডল।

ডাকাতদের একজনের গায়ে মেঘনাদের গুলি লাগে। জখম সঙ্গীকে টেনে বাইকে তুলে, নিজেদের একটি বাইক ফেলে রেখেই ১ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকার সোনা ও হিরের গয়না ব্যাগে ভরে দুটি বাইকে সাত জন চম্পট দেয়। ঘটনাস্থলে ফেলে যায় জামাকাপড়-ভর্তি দুটি ব্যাকপ্যাক, ৪২ রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন, ২ কোটি ৪১ লক্ষ টাকার গয়না-সহ ব্যাগ।

পালটা বাইকের পিছনে ছুটতে শুরু করেন পুলিশ আধিকারিক। ততক্ষণে আশপাশের সমস্ত নাকা পোস্টে খবর চলে যায়। খবর যায় প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ড পুলিশের কাছেও। বাইকে বেশিদূর পালানো সম্ভব নয় বুঝে ডাকাতরা আসানসোল-দক্ষিণ থানা এলাকায় এক চালককে গুলি করে একটি গাড়ি ছিনতাই করে। গুলিতে আহত হন এক পথচারীও। তাতে অবশ্য লাভ হয়নি। ঝাড়খণ্ড পুলিশের সহযোগিতায় সেই গাড়ি বাজেয়াপ্ত হয়। গ্রেফতার করা হয় গিরিডির গোপালগঞ্জের সুরজ সিং-কে। বিহারের সিওয়ান থেকে ধরা পড়ে গুলিতে জখম সোনু সিং। সে এখন ধানবাদের হাসপাতালে ভর্তি।

তদন্তে দেখা গিয়েছে মোট ২০ রাউন্ড গুলি চলেছে। সার্ভিস রিভলবার পুরো খালি করে দিয়েছেন মেঘনাদ মণ্ডল। ঘটনাস্থলের আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি, বাইকেও দুষ্কৃতীদের গুলি লেগেছে। এতকিছুর পরও মেঘনাদ অবশ্য নির্বিকার। ফিরে গেছেন দৈনিক রুটিনে। যেন, কিছুই হয়নি তার !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *