হিন্দুমহাসভার পূজার এবারের পুজোর থিম হতে চলেছে “মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ সম”, বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দুর্গাও
নিজস্ব সংবাদদাতা: বাঙ্গালী ও বাংলার অস্মিতা বিষয়ে রাজ্য রাজনীতি যখন উত্তাল তখন ভারতের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন আখিলভারত হিন্দুমহাসভা তাদের রুবি হাসপাতাল মোড়ের প্রসিদ্ধ দুর্গা পূজার এই বছরের থিম করতে চলেছে “মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ সম” । শুধু তাই নয় তাদের পূজা মণ্ডপে সাবেকি দুর্গা প্রতমার পাশাপাশি শোভা পাবে শিল্পী মানিক দেবনাথের তৈরি বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দুর্গা প্রতিমা এবং এই কারণে শিল্পীর নাম গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এবং দেশের সম্মানীয় পদ্মশ্রী পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব করতে চলেছে হিন্দুমহাসভার সদস্যরা । রুবি হাসপাতাল মোড়ের হিন্দুমহাসভার দুর্গাপূজা ইতিপূর্বেই তাদের থিম নির্বাচনের জন্য বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে । এর আগে বিভিন্ন বছর তাদের থিমগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো ভারতীয় টাকা থেকে গান্ধীর মুখ সরিয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মুখ আনার আবেদন, সনতানীদের জন্য নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দাবী এবং দুয়ারে দুর্গা । তবে এই বছর তাদের থিম জনপ্রিয়তার নিরিখে আগের সমস্ত বছরের থিমকে অতিক্রম করবে বলে অনুমান করেছেন হিন্দুমহাসভার রাজ্য সভাপতি ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামী ।

চন্দ্রচূড় বাবুর বক্তব্য হিন্দুমহাসভা পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রতিটি সদস্য গর্বিত হিন্দু বাঙ্গালী । আমাদের কাছে বাঙ্গালীর রোল মডেল হলেন রামকৃষ্ণ পরমহংস, স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ক্ষুদিরাম বসু, বাঘা যতীন, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি, বিনয়, বাদল, দীনেশ সহ ভারত মায়ের বীর সন্তানেরা । আমরা ইতিপূর্বে করা পূজা গুলোর ক্ষেত্রে কখনোই কোন সরকারি বা ব্যক্তিগত অনুদান পাইনি । হিন্দুমহাসভার কিছু সদস্যের পকেটের টাকা দিয়ে এতদিন আমাদের পূজা হয়েছে । তবুও পূজার থিমের মাধ্যমে আমরা সমাজকে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছি । আজ যখন বাংলা ও বাঙ্গালী বিষয়ে সারা দেশ উত্তাল তখন অবশ্যই ভারতের অন্যতম প্রাচীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের কর্তব্য সারা পৃথিবীর কাছে এই বিষয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করা । পৃথিবীর সমস্ত সংস্কৃতি ও ভাষাকে আমরা যেমন সম্মান করি সেই রকম আমরা কখনোই চাই না ইংরেজি, হিন্দি বা উর্দু কোন ভাষা ও সংস্কৃতি আমাদের বাঙ্গালী ভাষা ও সংস্কৃতির উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করুক । আমরা কোন মূল্যেই সাংস্কৃতিক ঔপনিবেশিকতাকে প্রশ্রয় দেবনা । তবে পারস্পরিক দোষারোপের রাজনীতিতে না গিয়ে আমাদের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন অবাঙালী প্রধান অঞ্চলে বিনামূল্যে বাংলা ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা ও প্রসার করবে । আমাদের পূজা মণ্ডপেও বাংলা টোলের মাধ্যমে পূজার দিনগুলোতে নির্দিষ্ট সময়ে অবাঙালীদের স্পোকেন বেঙ্গলী শেখানো হবে । আমাদের হিন্দু মহাসভার পূজার থিমে অবশ্যই চির শাশ্বত বাংলার ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রাধান্য পাবে ।

এদিকে হিন্দু মহাসভার অফিস সেক্রেটারি অনামিকা মন্ডল বলেন রাজ্য সভাপতি ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামীর নেতৃত্বে এবারের দুর্গা পূজায় আমরা বাংলার প্রশাসনিক প্রধান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধান অতিথি হিসেবে এবং সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপাল সি.ভি.আনন্দ বোসকে মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে পেতে আগ্রহী হলেও জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে সবাইকে আমরা আন্তরিক ভাবে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি । প্রতিবারের মত এবছরও যে হিন্দুমহাসভার দুর্গা পূজার থিম আলোচনার কেন্দ্রেবিন্দুতে থাকতে চলেছে সেই বিষয়ে মানুষের কোন সন্দেহ নেই ।