পরিকল্পনা করে ভবানীপুরে বহিরাগত ক্রমশ বাড়ানো হচ্ছে, উত্তরবঙ্গ থেকে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী
বেস্ট কলকাতা নিউজ : নিজের কেন্দ্র ভবানীপুর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ থেকে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, পরিকল্পনা করে ভবানীপুরে বহিরাগতদের ভিড় বাড়ানো হচ্ছে । তাঁর কথায়, “বস্তিগুলি ভেঙে বড় বড় বাড়ি হচ্ছে । আমি এগুলি সমর্থন করি না । আস্তে আস্তে পরিকল্পনা করে ভবানীপুরকে বহিরাগতদের দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হচ্ছে । বাংলায় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কথা আমি বলছি না । হঠাৎ করে এসে জায়গা কিনে, বাড়ি করে কিছু টাকা নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন ।”
মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গে থাকলেও মঙ্গলবার ভবানীপুরে বিজয়া সম্মেলনীর অনুষ্ঠানে তাঁর ভার্চুয়ালি যোগ দেওয়ার কথা ছিল ৷ কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য তা সম্ভব না হওয়ায় তিনি ফিরহাদ হাকিমকে ফোনে তাঁর বার্তা জানান ৷ এদিনের বিজয়া সম্মেলনীর অনুষ্ঠানে ফিরহাদ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সুব্রত বক্সী-সহ তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব । সেই অনুষ্ঠান থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা তুলে ধরেন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম ৷ এছাড়াও তিনি ঘোষণা করেন, “২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীকে এক লক্ষ ভোটে জেতাতে হবে ।” তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিও ইঙ্গিত দেন, আগামী বিধানসভা নির্বাচনেও সম্ভবত ভবানীপুর থেকেই প্রার্থী হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।

এদিকে রাজনৈতিক মহলের মতে ভবানীপুর নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য কেবল প্রশাসনিক নয়, স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তাও বটে । নন্দীগ্রামের অভিজ্ঞতার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের কেন্দ্র ভবানীপুর নিয়ে এমন আশঙ্কা নতুন করে রাজনৈতিক আলোচনার জন্ম দিয়েছে । বিরোধী শিবিরের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী এই বক্তব্যের মাধ্যমে আগাম অজুহাত খুঁজে নিচ্ছেন ৷ তৃণমূল সূত্রে পাল্টা মত— বিজেপি পরিকল্পিতভাবে কেন্দ্রটিতে ভোটব্যাঙ্ক প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে । এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পুজোর পরই বিজয়া । শুভ বিজয়াটা পর্যন্ত বলতে পারিনি । উত্তরবঙ্গে আমাকে আসতে হয়েছে । ভবানীপুর আমার নিজের কেন্দ্র । কর্মীরাই আমাদের সম্পদ ।” বক্তব্যের শেষে ভবানীপুরে সংগঠনকে আরও মজবুত করার জন্য দলের কর্মীদের তিনি আহ্বান জানান ।
নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রীকে হারিয়ে রাজ্যের রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । সম্প্রতি তিনি দাবি করেন, আগামী বিধানসভা ভোটে ভবানীপুর থেকেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন ৷ যদিও মুখ্যমন্ত্রী ভবানীপুর থেকেই প্রার্থী হবেন কি না, তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি ৷ কিন্তু, মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে মমতার স্পষ্ট বার্তার, নিজের কেন্দ্রের প্রতি তিনি যথেষ্ট সতর্ক ও সংবেদনশীল । আবার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর ‘বহিরাগত’ মন্তব্য আসলে বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলা। নন্দীগ্রামের মতো ভবানীপুরেও যদি একই পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেই আশঙ্কা নিয়েই তাঁর এই বক্তব্য ৷ এদিকে ফিরহাদ হাকিম ও সুব্রত বক্সির বার্তায় স্পষ্ট, সংগঠনের ভিত আরও শক্ত করতে মরিয়া শাসকদল।