“এস এম এস ” – এ গ্রুপ অফ আর্টিস্টস এর ১১ তম বার্ষিক প্রদর্শনী – “রূপম দেহী” ২৮ শে সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ শে নভেম্বর পর্যন্ত – www.smsgroupartist.com – এ দেখা যাবে

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : কলকাতার বিশিষ্ট শিল্পীগোষ্ঠী “এস এম এস” এ গ্রুপ অফ আর্টিস্টস শিল্পীগোষ্ঠীর বার্ষিক অনলাইন প্রদর্শনী শুরু হয়েছে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে ।প্রদর্শনীর সূচনা হয়েছে ২৮ শে সেপ্টেম্বর অর্থাৎ মহালয়ার দিন। চলবে পুরো দুইমাস অর্থাৎ ২৮ ণভেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত। প্রদর্শনীর শিরোনাম “রূপম দেহী” – যা থেকে প্রতীয়মান দুর্গোৎসব কে মাথায় রেখে এই প্রদর্শনীর পরিকল্পানা করা হয়েছে। দলের প্রত্যেক সদস্য দুটি করে শিল্পকাজ দেখিয়েছেন। বিষয় ও আঙ্গিকের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য যেমন রয়েছে , এবং কিছু সীমাবদ্ধ তাও চোখে পড়ে ।

বর্ষীয়ান শিল্পী যুধাজিৎ সেনগুপ্ত এর কাজ এই প্রদর্শনীর সেরা প্রাপ্তি। রঙ – রেখার জমাট সহাবস্থানে তিনি সাজিয়ে তুলেছেন চিত্রপট। পুরো পট জুড়ে কাজ। মূর্ত – বিমূর্তের টানাপড়েনে ছবিতে এসেছে এক অভাবিত সৌন্দর্য । জলরঙের ছাপ-ছোপ আর দ্রুতগতির ছন্দময় রেখার যুগলবন্দীতে গড়ে উঠেছে প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর এক গীতিময় পরিবেশ। ছবির শিরোনাম ও তাই “ জয় অব লাইফ ”। ফর্ম ও কন্টেন্ট কে কিভাবে ইন্টিগ্রেট করতে হয় তা শিল্পী দক্ষতার সাথে দেখেয়েছেন। ওনার করা দুর্গার পোষ্টার টিও আলাদা করউল্লেখের দাবী রাখে

 আমার দুর্গা - পূজা সরকার
আমার দুর্গা – পূজা সরকার

পূজা সরকার এর কাজে সবসময় একটা চমক থাকে।“ মহিষাসুর মর্দিনী ” কাজটি সেরকমই। সুউন্নত স্তন সহ ফিমেল টরসো এর আদলে হাত ব্যাগ আর তার গায়ে আঁকা প্রচুর চোখ – পুরুষ জাতির ভয়ারিস্টিক প্লেজার কে কী শিল্পী এখানে চোখের রূপক এর মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন – কে জানে ? ফোর গ্রাউন্ডে টিকটিকি ।সব মিলিয়ে অস্বস্তিকর পরিবেশ। “ আমার দুর্গা ” কাজটিতে আধুনিক নারীকে বা বলা ভাল শিল্পী যেন নিজেকেই দুর্গা রূপে চিত্রিত করেছেন। বেশ স্বতঃ স্ফূর্ত কাজ । রঙ – রেখার সুন্দর

মেলবন্ধন ঘটেছে চিত্রপটে ।এটি এই প্রদর্শনীর অন্যতম চিত্তাকর্ষক ছবি।

আধুনিক সমাজে নারীর অবস্থানকে কিছুটা বক্র ও তির্যক ভঙ্গিতে তুলে ধরার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায় সিদ্ধার্থ ঘোষের কাজে।তিনি এক ধরনের ব্ল্যাক

সিদ্ধার্থ ঘোষ
সিদ্ধার্থ ঘোষ

রোমান্টিসিজম কে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করেছেন বলা চলে। প্রধান বর্ণ হিসাবে তাই চয়ন করেছেন কালো। আর সেই কালোর টোনাল ভ্যারিয়েসন ঘটিয়েছেন দক্ষতার সাথে। চিত্রপটে সাদা – কালোর বণ্টনে ও মুনশিয়ানা লক্ষনীয় । সব মিলিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত কম্পোজিশন ।

উমেশ চন্দ্র বেরা এর লোকজ আঙ্গিকে নির্মিত পুতুল সদৃশ ফিগার গুলি মনে বৃহত্তর কোন অভিঘাত তৈরি করতে পারে না। অতিরিক্ত রঙ, বুনট ও মোটিফের ব্যবহারে মূর্তিগুলি ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে ।ফর্মের নান্দনিক আবেদন ক্ষুণ্ণ হয়েছে।সম্ভবত পেপার পাল্প দ্বারা কাজ গুলি করা। কিন্তু কোথাও মাধ্যম উল্লিখিত হয়নি।

নারী ফিগার কে মূল উপজীব্য করে কাজ করেছেন পাভেল ব্যানার্জী । রোমান্টিক ভাবালুতায় আক্রান্ত তাঁর কাজ। উজ্জ্বল রঙের ইম্প্যাস্টো অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করা সত্ত্বেও ছবিতে বর্ণ দ্যুতি আসেনি।কারন খুব বেশি রঙ নিয়ে ঘষাঘষি করেছেন। আর ছবিতে সঠিক মাত্রায় ডার্ক টোনের অনুপস্থিতি রয়েছে। যার ফলে চিত্রে কালার কনট্রাস্ট তৈরি হয়নি। শিল্পী চিত্রপটের সারফেস নিয়ে ভেবেছেন বেশি , কিন্তু ফর্মের কাঠামোগত সংহতি নিয়ে ভেবেছেন কম।এ ব্যাপারে তাঁকে সচেতন হতে হবে।

মাইকেল মিতেই এর রং-রেখার হাত ভাল।কিন্তু কম্পোজিশনের ধারনাটি গতানুগতিক।কাজগুলিও সচিত্রকরন ধর্মী । এত গুছিয়ে ছবি আঁকেন যার ফলে টেকনিক ও কনটেন্ট যেন আবদ্ধ হয়ে পড়ে ।আনন্দ আর দুঃখের ছবি তাই আলাদা করা যায় না । মাইকেলের ছবি গুলি ঘর সাজানোর উপযোগী ।কিন্তু সমকালীন শিল্পকলা সৃষ্টির ক্ষেত্রে যে আরও ঝুঁকি নেওয়া বাঞ্ছনীয় তা শিল্পী কে বুঝতে হবে।না হলে এক ধাঁচের আপাত সুন্দর ছবির মধ্যে তিনি আটকা পড়ে যাবেন ।

বিধান চন্দ্র সরকারের কম্পোজিশন এর ধারনা বেশ সাধারন মানের। স্টাইলাইজেসন করেছেন কিন্তু তা সত্ত্বেও ড্রয়িং এর দুর্বলতা ঢাকতে পারেন্ নি ।নিউট্রাল ব্রাউন ও আলট্রা মেরিন ব্লু এর প্যালেট ও বিশেষ চিত্তাকর্ষক নয়।কম্পজিসন হিসাবে “ জননী ” কাজটি কিছুতা উতরেছে।

এই শিল্পী গোষ্ঠীর সক্রিয়তা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য ।আশা করব তাঁরা শিল্পচর্চা অব্যাহত রাখবেন ।প্রতিষ্ঠাতা সদস্যা পুজা সরকারের উৎসাহ আর উদ্যম প্রশংসনীয় ।বাকি সকল সদস্যরাও সক্রিয় ।আর তাই ভবিষ্যতে আরও উন্নততর শিল্পকাজ দেখার আশা করাই যায় । অগ্রিম শুভেচ্ছা রইলো ।

শাম্ব পি বিশ্বাস

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *