শিলিগুড়ির এই দুটি মন্দিরে এখনো চালু আছে বলি প্রথা
শিলিগুড়ি : সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে অনেককিছু। পশুবলি প্রথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে বহু মন্দিরে। তবে শিলিগুড়ি শহরের দুটি কালী মন্দিরে এখনও রীতি মেনে পুজোর রাতে মা কালীকে ‘তুষ্ট’ করতে ভক্তরা পাঁঠা নিয়ে আসেন বলি দেওয়ার জন্যে। প্রতি বছর পুজোর রাতে গড়ে ৫০টি পাঁঠাবলি হয় কিরণচন্দ্র শ্মশানঘাটের কালী মন্দির এবং খালপাড়ার শ্যামা মন্দিরে।
পশুবলি আইনত নিষিদ্ধ। তবে দুই মন্দির কমিটির সদস্যরা বিষয়টিকে নিজেদের ঘাড়ে না রেখে ভক্তদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁরা একসুরে বলেছেন, ‘ভক্তরা মনস্কামনা পূরণের আশায় যদি বলি দেওয়ার জন্য পাঁঠা নিয়ে আসেন, সেক্ষেত্রে আমরা বাধা দিতে পারি না।’ দুই মন্দিরের দূরত্ব খুব বেশি নয়। বর্তমানে দুটি মন্দিরেই স্থায়ী প্রতিমা রয়েছে। তবে এক সময় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হত। খালপাড়ায় স্থায়ী কালী মন্দির তৈরি হয় ১৯৬৭ সালে। শ্যামা মন্দির কমিটির সভাপতি নান্টু চক্রবর্তী বলেন , ‘একসময় যৌনকর্মীরা এই পুজো শুরু করেছিলেন। সারাবছর একটি পাথরকে কেন্দ্র করে পুজো হত। পরে যৌনকর্মীরাই এই মন্দির তৈরি করেন।’ প্রয়াত কংগ্রেস নেতা উদয় চক্রবর্তীর হাত ধরে মন্দিরে আসে সাড়ে তিন ফুটের স্থায়ী কালী প্রতিমা। নান্টুর কথায়, ‘উদয়বাবু যতদিন বেঁচে ছিলেন, তিনি নিজেও পাঁঠাবলি দিতেন।’ সেই প্রথা এখনও চলে আসছে এখানে। এই মন্দিরে কালীপুজোয় যজ্ঞ হয়।
তবে কিরণচন্দ্র কালী মন্দিরে যজ্ঞ হয় না। একদম শুরুর দিন থেকে কিরণচন্দ্র শ্মশানে কালী আরাধনায় রত সীতারাম পাঠক। তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের পুজোয় যজ্ঞ হয় না। রাত ১২টায় পুজো শুরু হয়। পাঁঠাবলির মধ্যে দিয়ে শেষ হয় পুজো।’কিরণচন্দ্র কালী মন্দিরে বছর চারেক আগে স্থায়ী প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সীতারাম জানান, আগে ঘোগোমালি থেকে ছয় ফুটের প্রতিমা নিয়ে আসা হত। দুই মন্দিরে নিত্যপুজো হয়। নান্টু বলেন, ‘আমাদের মন্দিরে পূর্ণিমা-অমাবস্যায় দই, মিষ্টি নিবেদন করা হয় মায়ের কাছে। এছাড়াও সারাবছর বিশেষ পুজোর আয়োজন তো থাকেই।’ তবে দুই মন্দিরের কালীপুজোর মূল আকর্ষণ যে পাঁঠাবলি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দুই মন্দির কমিটির সদস্যদের একসুরে বক্তব্য, ‘ভক্তরা যা চাইবেন, সেটাই হবে।’
তবে পশুবলি নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও মানুষ এখনও পাঁঠা নিয়ে আসেন বলি দেওয়ার জন্য। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবের দিকটিতে ইঙ্গিত করেছেন পশুপ্রেমী সংগঠন নির্বাক আরণ্যকের সভাপতি দেবর্ষিপ্রসাদ গুপ্ত। তাঁর কথায়, ‘শাস্ত্রে কোথাও ছাগল বলি দেওয়ার কথা বলা হয়নি। কিছু মানুষ নিজেদের ব্যবসায়িক সুবিধার জন্যে এই প্রথা চালু করেছিলেন। তবে গত ১০ বছরে পশুবলি অনেক মন্দির থেকেই উঠে গেছে। চালু আছে সামান্য কয়েকটি জায়গায়।