জগদ্দলের পর ফের কাঁকিনাড়া, জুটমিল বন্ধের জেরে কর্মহীন হল অন্তত ৩ হাজার শ্রমিক কর্মচারী
বেস্ট কলকাতা নিউজ : কাঁচাপাটের জোগানের অভাবে বন্ধ হয়ে গেল আরও একটি জুটমিল ৷ জগদ্দলের পাঁচ হাজারের পর কর্মহীন হয়ে পড়লেন কাঁকিনাড়ার নফরচাঁদ জুটমিলের প্রায় তিন হাজার শ্রমিক। জানা গেছে গতকাল বুধবার সকালে জুটমিলের শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এসে দেখেন, কারখানার গেটে ঝুলছে ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিশ । তাতে লেখা, ‘কাঁচা পাটের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে জোগানে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে । লোকসানের মুখে পড়ছে মিল কর্তৃপক্ষ। তাই, সাময়িক বন্ধ রাখা হচ্ছে জুটমিল ।’ এই নোটিশ দেখামাত্রই এদিন চরম ক্ষোভে ফেটে পড়েন কারখানার শ্রমিকরা। তাঁদের আরো আশঙ্কা, উৎপাদন কম হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে আদতে পুরোপুরিভাবে মিল বন্ধ করার চক্রান্ত করছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। কী খাবেন, কীভাবে সংসার চলবে, সেই আশঙ্কায় ঘুম উড়েছে কাজ হারানো শ্রমিকদের একাংশের। মূলত দু’দিন আগেই কাঁচা পাটের জোগানের অভাবের কারণ দেখিয়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল জগদ্দলের জুট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড। যার জেরে উৎসবের মরশুমে রাতারাতি কাজ হারিয়েছিলেন প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক। সেই ঘটনার দু’দিন পর ঠিক একই কারণ দেখিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ সাময়িক বন্ধ করে দিলেন কাঁকিনাড়ার নফরচাঁদ জুটমিল।

এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যারাকপুরের ঘোষপাড়া রোডের উপর অবস্থিত এই জুটমিলটি অনেক পুরনো। এক সময়ে শ্রমিকদের কাজে গমগম করত কারখানাটি। আগে তিন শিফটে কাজ হলেও বর্তমানে সেই সংখ্যাও কমে দাঁড়িয়েছে দুই শিফটে। সবমিলিয়ে এখানে কাজ করেন প্রায় তিন হাজার শ্রমিক। দিনে-দিনে কারখানার উৎপাদন কমে যাওয়ার অভিযোগে শ্রমিকদের মধ্যে কাজ হারানোর আশঙ্কা ছিল আগে থেকেই। সেই আশঙ্কায় বুধবার সত্যি হল ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিশ পড়ায়। যা ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে কারখানা চত্বরে।
এই বিষয়ে রাকেশ দাস নামে এক শ্রমিক বলেন, “কারখানার বেশিরভাগ ইউনিটই এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মালিকপক্ষ বলছেন কাঁচা পাটের জোগানের অভাব রয়েছে। সেই কারণ দেখিয়েই মিলের গেটে নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছে। আমাদের তো সংসার রয়েছে। কাজ না থাকলে সন্তানদের খাওয়াব কী ? তারপর আবার ১৫ দিনের জন্য বন্ধ থাকবে। আমরা ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি। না ভাবছে কারখানা কর্তৃপক্ষ, না ভাবছে সরকার। কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে মালিকপক্ষের থেকে শ্রমিকদেরই ক্ষতি বেশি। এটা বুঝেও না বোঝার ভান করছে মিল কর্তৃপক্ষ।”
এদিকে, কারখানা বন্ধ করা নিয়ে জুটমিল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন ভাটপাড়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা দেবজ্যোতি ঘোষ। তিনি বলেন, “এই সময়ে কাঁচা পাটের দাম বেশি থাকে। তাই, মুনাফার জন্য মালিকপক্ষ মিল বন্ধ করে দেয়। বাম আমলে শ্রমিকদের কথা না ভেবে সরকার মালিকপক্ষকে সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দিত। কিন্তু, আমাদের সরকার সে পথে হাঁটেনি। সবসময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রমিকদের হয়ে কথা বলেছেন। সম্প্রতি রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপে ২৮ দিনের মধ্যে রিলায়েন্স জুটমিল খুলেছে। এক্ষেত্রেও সরকার শ্রমিক স্বার্থে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে।”

