বেঁচে থাকার এক প্রাণপাত লড়াই ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত ভূমিতে! ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’রা একরকম মরিয়া দাঁতে দাঁত চেপে ঘুরে দাঁড়াতেও
বেস্ট কলকাতা নিউজ : এ যেন একেবারে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ভূমি। সব কিছু তছনছ, লণ্ডভণ্ড পরিস্থিতি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ৩ দিন কেটে গেলেও চারিদিকে এখনও হাহাকার আর হাহাকার। এখনও গ্রামজুড়ে আর্তনাদের আওয়াজ। অসহায়, নিঃস্ব মানুষগুলোর সম্বল বলতে দু’চোখের জল। জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির বার্নিশ কালিবাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে ৩-সাড়ে ৩ মিনেটের ঝড় । মাথার ওপর শুধু ত্রিপল আর চতুর্দিক ফাঁকা। বুধবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল গ্রামের মানুষজন জানপ্রাণ কবুল করে আগলে রয়েছেন ভিটেমাটি।
“ফের নতুন করে শুরু করা কি সম্ভব? সব কিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।” এই কথা বলতে বলতে ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠলেন বার্নিশ কালীনগরের বাসিন্দা শিমুলি রায়। ঘরের চালা শুধু নয়, তাঁদের পুরো বাড়িটাই উড়ে গিয়েছে। দেখে মনেই হবে না সেখানে কোনও বাড়ির আদৌ অস্তিত্ব ছিল কিনা। স্বামী সতীশ রায় ব্যাঙ্ক থেকে ২ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন মুদিখানা দোকান বড় করার স্বপ্ন নিয়ে। সঙ্গে ছিল ভালো বাড়ি তৈরির ইচ্ছা। সব আশা এক বিকেলের ঝড় উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে।
এই দুর্যোগে মানসিক অবস্থা এমনই হয়েছে যে শারীরিকভাবে নড়াচড়ার ক্ষমতাও যেন হারিয়েছেন শিমুলি দেবী। সতীশ ও শিমুলির এক ছেলে ও এক মেয়ে। সতীশ জানান , “ঘটনার দিন আমরা চারজনই ঘরের মধ্যে চাপা পড়ে গিয়েছিলাম। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছি। জানি না জীবনে আর দাঁড়াতে পারব কি না। এদিকে যে ব্যাঙ্ক থেকে ২ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছি তাঁরা এসে দেখে গিয়েছে আমাদের এই হাল। জীবনের সব স্বপ্নই চুরমার হয়ে গিয়েছে।” সতীশের ঘরের পাশে দাদা তারাপদ রায়ও ঝড়ে বসতিহারা। মাথার ছাদ হারিয়ে তিনিও আজ গৃহহীন।
সরকারিভাবে কিছু ত্রাণ পেয়েছেন এখানকার বাসিন্দারা। কিছু বেসরকারি সংস্থাও পাশে দাঁড়িয়েছে। রান্নার জন্য স্টোভ, বাসনপত্র, চাল, ডালের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাতারাতি বিদ্যুতের ব্যবস্থাও হয়েছে। তবে মাথার ওপর পলিথিনের টুকরো ছাড়া তাঁদের থাকার কোনও সুরাহা তড়িঘড়ি করতে পারেনি সরকার। সামান্য বৃষ্টি হলেই দফারফা অবস্থা হবে সহায় সম্বলহীন মানুষগুলোর।
কৃষিকাজ করে জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে শিখেছিলেন বছর পঁয়ত্রিশের তাপস রায়। তাঁর পাকা বাড়িতে কাঠের কাঠামোয় ছিল টিনের চাল। সেই কাঠামো ও চাল কোথায় যে ঝড়ে উড়ে গিয়েছে তা বলা মুশকিল। নিজের জীবনের লড়াইয়ের কাহিনী বলতে গিয়ে চোখ জলে ছল ছল করে উঠল তাপসের। তাঁর নিজের ৪ বিঘে জমি রয়েছে, আরও ৬ বিঘে জমি ভাগে নিয়ে চাষ করেছিলেন। ঝড়ের দাপটে ধান ও করলা চাষে কয়েক লক্ষ নষ্ট হয়ে গিয়েছে তাপস।
ওই পাড়াতেই থাকেন বছর একুশের গাড়ি চালক জয়ন্ত রায়। এখনও তাঁর বাবা-মা জলপাইগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। জয়ন্তর বোন অনিমার সামনে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। বাবা কলেন রায় কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। মাত্র দেড় বিঘে জমি রয়েছে কলেনবাবুর। তাতে ধানের চাষ করনে। জয়ন্ত বলেন, “ব্যাঙ্ক থেকে মোট দেড় লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়া আছে। কী করে শোধ করব তা বুঝতেই পারছি না। ঝড়ের দিন জখম বাবা ও মাকে স্থানীয়রা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে।” একটু পরে হাসপাতালে যাবেন ও রাতে সেখানেই থাকতে হবে।