শীতে বাজার কাঁপাচ্ছেন জলপাইগুড়ির এই চা কন্যা
জলপাইগুড়ি : দুটি পাতা একটি কুড়ি কি কথা বলে? বলে বোধ হয়! যেমন জলপাইগুড়ির শ্যামশ্রী বর্মন ওরফে চা–কন্যার হাতের ছোঁয়ায় গোলাপের মন ভোলানো আমেজ, অপরাজিতার সতেজতা। নিজেই তৈরি করেছেন চারটি ব্লেন্ড–এর চা। তিনটি হার্বাল — রেড ওয়াইন, ব্লু সিটরাস ব্লুম এবং রিলাক্স চা। অন্য ফ্লেভারটি রাম চা। ঘরকন্যা সামলে দিনের শেষে জলপাইগুড়ি শহরে থাকা নিজের স্টল সামলান। সেখানেই অনেকে তাঁকে চা–কন্যা নামে ডাকেন। তার জন্ম অসমে। বিবাহ সূত্রে জলপাইগুড়ি আসা। পরিবার বলতে স্বামী, মেয়ে, শ্বশুরশাশুড়িকে নিয়ে পাঁচ জনের সংসার। চার বছর আগে জলপাইগুড়ি যুবক বুবাই বর্মনের সঙ্গে বিয়ে হয় শ্যামশ্রীর। স্বামী রেলের টিকিট পরীক্ষক। উনিশ মাসের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
তারপরেও সন্তান, পরিবার সামলে প্রতিযোগিতার বাজারে টেক্কা দিচ্ছেন তিনি। চা ছাড়া যাঁদের সকাল–সন্ধ্যা জমে না, তাঁদের তাক লাগিয়ে দিতে পারেন চা–কন্যা। তাঁর নয়া আবিষ্কার ‘ওয়াইন টি’। শুধু দুধ চা বা লাল চা নয়, শ্যামশ্রীর হাতে চা যেন নতুন মাত্রা পেয়েছে। শ্যামশ্রীর মেসোমশাই ছিলেন অসমের এক বিখ্যাত চা বাগানের কর্মী। সেখানেই তাঁর চায়ের সঙ্গে পরিচয়, ভালো লাগা। বিয়ের পরে জলপাইগুড়ি এসে শ্বশুরবাডি়র গড়পড়তা চায়ে মন বসেনি মেয়েটির। স্বামীর ভিটেতে শুরু করেন চা নিয়ে গবেষণা। টি–ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি কলেজে।
এখন পড়াশোনা, গবেষণা, সংসার তিনটেই চলছে। হাতেকলমে শিখে জলপাইগুড়ির ছোট চা বাগানের বাছাই করা পাতার সঙ্গে ভেষজ উপাদান মিশিয়ে তৈরি করেছেন রেড ওয়াইন টি, যা ইতিমধ্যেই ফিমেল টি বা মেয়েলি চা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে শৌখিন কালো চা যা ‘রাম চা’ হিসেবে এখন তুমুল চর্চায়। চা পাতার সঙ্গে অপরাজিতা ফুলের মিশ্রণ ঘটিয়ে আরও একটা চা তৈরি করেছেন, নাম রেখেছেন ব্লু সিটরাস ব্লুম। প্রতি পেয়ালা ৩০ টাকা। তাঁর ক্যাফেতে চা খেতে অনেকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন, এতেই তৃপ্ত শ্যামশ্রী। তিনি বলেন, ‘অনেকে চা খেতে আসেন। অনেকেই আবার খাওয়ার পরে চা কিনে নিয়ে যান। কী ভাবে বানাতে হবে তাও বলে দিই।’ এখানেই থেমে থাকতে রাজি নন শ্যামশ্রী। তিনি বলেন, ‘নতুন বছরে ধাপগঞ্জে ক্ষুদ্র চা শিল্পীদের নিয়ে আমি হ্যান্ডমেড চা তৈরি করব। দেশীয় চায়ের প্রচারই আমার মূল লক্ষ্য।’