সাবধান হন বর্ষায় ব্লিচিং পাউডার ব্যবহারের সময় , মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে অসাবধানতায়
বেস্ট কলকাতা নিউজ : ডেঙ্গু সহ বিভিন্ন মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে নর্দমা বা জলে জলে এই বর্ষাকালে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা হয়। অধিক পাউডার প্রয়োগে মশার লার্ভার মৃত্যু হয় এবং ব্যাকটেরিয়া বিনষ্ট হয়। এছাড়াও ঘর বাড়ি জীবাণুমুক্ত রাখতে ব্লিচিং পাউডার বহুদিন ধরে ব্যবহার করি আসি আমরা। ভুলভাবে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহারে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। অনেকেই এর বিষক্রিয়া সম্পর্কে জানেন না। ঘরবাড়ি জীবাণু মুক্ত রাখতে ব্লিচিং পাউডার বহুদিন ধরে ব্যবহার হয়ে আসলেও এর বিষক্রিয়া সম্পর্কে অনেকেই জানেন না।
ব্লিচিং পাউডার থেকে ক্লোরিনের ঝাঁজালো গন্ধ পাওয়া যায়। এটি জলীয় বাষ্প শোষণ করে জলের সঙ্গে আংশিক বিক্রিয়া করে ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড ও ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইড উৎপন্ন করে। ব্লিচিং পাউডার অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়ায় ক্লোরিন উৎপন্ন করে। জীবাণু নাশক হিসেবে জলকে বিশুদ্ধ করতেও ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ক্লোরোফরম প্রস্তুতিতে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা হয় কাগজ শিল্পে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা হয়। ব্লিচিং পাউডারের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষতিকারক উপাদান লুকিয়ে রয়েছে। যদি সরাসরি পাউডার ত্বকে লাগে তাহলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। আবার ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধান হতেই হবে।
এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া’তে অবস্থিত ‘ডে মোয়েন ইউনিভার্সিটি’র থমাস বেনজোনি এবং ‘মার্সার ইউনিভার্সিটি মেডিকেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’য়ের জন ডি. হ্যাচার তাদের গবেষণা পত্রে উল্লেখ করেন, “কোনো বস্তু সাদা কিংবা রং হালকা করতে বৃহৎ পরিসরে ব্লিচিং উপাদান ব্যবহার হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় পরিষ্কার ও জীবাণু মুক্ত করার কাজে। ব্লিচ সাধারণভাবে জলে দ্রবণীয়।” ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’য়ে প্রকাশিত গবেষণা পত্রে, এই দুই গবেষক আরও জানান- গৃহস্থালী কাজে ব্যবহারের জন্য যেসব ব্লিচ পাওয়া যায় সেগুলোর প্যাকেটে লেখা নির্দেশিকা অনুসারে ব্যবহার করতে হবে। না হলে বিপদ হতে পারে। আর জল ছাড়া অন্য কোনো উপাদানের সাথে ব্লিচ মেশানো যাবে না। যেমন- অন্যান্য পরিষ্কারের জিনিসের সঙ্গে যদি ব্লিচ পাউডার মেশানো হয় তবে সাংঘাতিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। বিশেষ করে টয়েলট পরিষ্কারক ও অ্যামোনিয়া’র সাথে মিশ্রিত হলে ক্লোরিন গ্যাস নির্গত হয়। এই গ্যাস আর্দ্র কোষের সংস্পর্শে আসলে- যেমন ফুসফুসে গেলে ‘হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডে পরিণত হয়ে নিঃশ্বাসের সমস্যা তৈরি করে। ফলাফল হতে পারে মৃত্যু।
সমস্যার লক্ষণ চোখ জ্বালাপোড়া করা, লাল হওয়া, জল পড়া ও ঝাপসা দেখা। মুখে বা গলায় গেলে অস্বস্তি দেখা দেবে। গিলতে সমস্যা হতে পারে। ত্বকে লাগলে জ্বালাপোড়ার সমস্যা দেখা দেয়। পাকস্থলী ও হজমন্ত্রে গেলে বমি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফুসফুসে গেলে জ্বালাভাব হওয়ার পাশাপাশি ফুসফুসের বাতাস চলাচলের রাস্তার পেশি অসাঢ় বা কঠিন হয়ে যেতে পারে, যাকে ‘ব্রঙ্কোসপ্যাজম’। এর ফলে আক্রান্তের মৃত্যু হতে পারে। পরিত্রাণের জন্য যা করতে হবে চোখের ক্ষেত্রে বার বার জলের ঝাপটা দিতে হবে। অস্বস্তি কমে আসলেও দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে। ত্বকে অস্বস্তি দেখা দিলে হালকা সাবান ও জল দিয়ে ভালো মতো ধুতে হবে। মুখ বা গলায় গেলে প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে দুধ পানে অস্বস্তি দ্রুত কমে। পেটে গেলে বমি করানো যাবে না। ব্লিচের কারণে যদি খাদ্যনালী জ্বালাপোড়া করে তবে বমির কারণে আরও জ্বালা করতে পারে। এক্ষেত্রেও তাই প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে হবে। ফুসফুসের ক্ষেত্রে বেশি বিপজ্জনক। হাঁপানি রোগিদের জন্য ব্যবহৃত ‘অ্যালবাটেরল এমডিআই ইনহেলার’ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয় গবেষণা এই পত্রে। আর অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।