অখিলভারত হিন্দুমহাসভা ও বাংলার সৌহার্দ্যের মেলবন্ধনে বিশ্ব দরবারে এবার বাংলার ঢাক শিল্প
নিজস্ব সংবাদদাতা : ভারত বর্ষের অন্যতম প্রাচীন প্রতিষ্ঠান অখিলভারত হিন্দুমহাসভা এবং বাংলার সৌহার্দ্যের যৌথ উদ্যোগে বাংলার ঢাক শিল্প এবার ইউনেস্কো ও বিশ্ব দরবারে স্থান পেতে চলেছে । হিন্দুমহাসভার রাজ্য সভাপতি ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামীর উপস্থিতিতে কলকাতার বিখ্যাত শোভাবাজার রাজবাড়িতে হিন্দুমহাসভা ও বাংলার সৌহার্দ্যের সদস্যরা উপস্থিত থেকে আজ বাংলার ঢাক শিল্পকে বিশ্ব প্রাঙ্গণে পৌঁছে দেওয়ার বার্তা দিলেন । শুধু তাই নয় বাংলার মহিলা ও পুরুষ ঢাকি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দৈনন্দিন জীবনের দুঃখ যন্ত্রণার কথা এবং সেখান থেকে তাদের উত্তরণের উপায় অন্বেষণের প্রস্তাব নিয়ে সংগঠন দুটির যৌথ কমিটির সদস্যরা গণডেপুটেশন দিতে চলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল সি.ভি.আনন্দ বোস এবং সর্বোপরি ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে ।

এদিকে হিন্দুমহাসভার রাজ্য সভাপতি ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামী বলেন বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজার সাথে ঢাক বাদ্য একেবারে সম্পৃক্ত । ঢাক বাদ্যের উপস্থিতি ছাড়া বাংলার ঘরের মেয়ে উমার আরাধনা অসম্পূর্ণ । শুধু তাই নয় রামায়ণে ভগবান শ্রী রামচন্দ্র রাবণ বধের আগে যখন দেবী দুর্গার আরাধনা করছেন বা রক্ষসরা রাবণের ভাই কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য প্রয়াস করছে তখনও ঢাক বাদ্যের উল্লেখ রয়েছে । পরবর্তী কালে রণবাদ্য হিসেবে এবং সরকারি নির্দেশিকা প্রচারের সময় ঢাকের উল্লেখ পাওয়া যায় । এহেন বিখ্যাত বাদ্যযন্ত্রটি আজও তার কুলীন আসন পায়নি এবং বাংলার লোকসংস্কৃতির অংশ বা লোকবাদ্য হিসেবেই থেকে গিয়েছে । আমরা চাই ঢাক বাদ্য এবং ঢাকি বন্ধুদের প্রকৃত সম্মান প্রদান করে তাদের আর্থসামাজিক জীবনের সার্বিক উন্নতি সাধন ।
আবার ঢাকি সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিয়ে গঠিত সংগঠন বাংলার সৌহার্দ্যের সম্পাদক সঞ্জীব সরকার বলেন আমাদের গরীব ঢাকি মায়েরা এবং ভায়েরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে এই পূজার সময়ের জন্য । তবুও অনেকসময় বিভিন্ন লোভী ব্যক্তি বা সংস্থার দ্বারা আমরা ঢাকিরা প্রতারিত হই । পূজার জৌলুসের পাশে ঢাকিদের জীবন ওই প্রদীপের নিচে থাকা অন্ধকারের মতোই কারণ আমরা আজও যথার্থ সম্মান ও রুজিরুটির অধিকার থেকে বঞ্চিত । প্রশাসনিক আধিকারিক আশুতোষ মজুমদার বলেন আমি ছোট বেলায় মা বাবাকে হারিয়েছি, কিন্তু হিন্দুমহাসভা ও বাংলার সৌহার্দ্যের প্রচেষ্টায় আজ ঢাকি মা ও বাবাদের জন্য যতটুকু করতে পারছি সেটা ঈশ্বরের আশীর্বাদ না থাকলে কোনভাবেই সম্ভব নয় ।
সমাজসেবী সমীরণ চৌধুরী বলেন শিল্প ও সৃষ্টির মেলবন্ধনে সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে অবশ্যই ঢাকি ভাইদের পাশে অর্থনৈতিক ভাবে দাঁড়ানো প্রয়োজন । হিন্দুমহাসভার অফিস সেক্রেটারি অনামিকা মন্ডল বলেন রাজ্য সভাপতি ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামীর নেতৃত্বে ও বাংলার সৌহার্দ্যের সম্পাদক সঞ্জীব সরকারের ঐকান্তিক প্রয়াসে আগামী দিনে আমরা রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র সরকারের প্রশাসনিক প্রধান ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইউনেস্কোর কাছে বাংলার ঐতিহ্য ঢাক শিল্পকে প্রকৃত সহযোগিতা ও সম্মান প্রদানের প্রয়াসে দরবার করতে চলেছি । আজ অনুষ্ঠানে পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের সুযোগ্য পুত্র বিশিষ্ট তবলা বাদক পণ্ডিত মল্লার ঘোষ উপস্থিত থেকে বাংলার ঢাকিদের আরো ভালো ভাবে প্রশিক্ষণ প্রদানের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন । এদিন শোভাবাজার রাজবাড়ির পক্ষ থেকে এবারের পূজোর দায়িত্বে থাকা দেবরাজ মিত্র ও ডাক্তার পার্থসারথি মুখার্জী আজ সমগ্র অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বাংলার ঢাক শিল্পের উন্নতির জন্য অখিলভারত হিন্দুমহাসভা ও বাংলার সৌহার্দ্যের নেওয়া এই ঐতিহাসিক যৌথ প্রয়াসকে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদও জানালেন।