অমর বিপ্লবীকেও টানাটানি করবে ভাষা-সন্ত্রাসীরা ? ক্ষুদিরাম বসুর প্রয়াণ দিবসে বলিউডকে টেনে কড়া বার্তা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : শহিদ বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর প্রয়াণ দিবস । ১৯০৮ সালের এই দিনে মাত্র ১৮ বছর বয়সে হাসিমুখে ফাঁসিকাঠে ঝুলেছিলেন তিনি । দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য প্রাণ উৎসর্গের এমন দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল । এই দিনটি বাঙালি জাতির জন্য যেমন বেদনার, তেমনই গর্বেরও । স্বাধীন ভারতের প্রতিটি নাগরিকের কাছে এটি এক গভীর তাৎপর্যের দিন । এই বিশেষ দিনে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এ প্রসঙ্গে ‘কেশরী চ্যাপ্টার 2’-তে এই বিপ্লবীর ভুল নাম ব্যবহারের কথা টেনে এনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷

গতকাল সোমবার ক্ষুদিরাম বসুর প্রয়াণ দিবসে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি, হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে ভারতবাসী ৷ বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর প্রয়াণ দিবসে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম ।” তবে শুধু শ্রদ্ধাজ্ঞাপনেই থেমে থাকেননি মুখ্যমন্ত্রী । ক্ষুদিরামের জীবন ও আত্মত্যাগ নিয়ে সম্প্রতি এক বলিউড ছবিতে বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপিত হওয়ায় তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশের জন্য এই দিনটিই বেছে নেন মমতা ৷ তাঁর অভিযোগ, ‘কেশরী চ্যাপ্টার ২ ‘ নামে হিন্দি ফিল্মে ক্ষুদিরাম বসুর পদবি ‘সিং’ দেখানো হয়েছে এবং তাঁকে পঞ্জাবের ছেলে হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে ।এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “স্বাধীনতার জন্য যাঁরা জীবন দিয়েছেন, তাঁদের অপমান করা হচ্ছে কেন ? পথিকৃৎ অমর বিপ্লবী ক্ষুদিরামকে ধরেও টানাটানি করবে ভাষা-সন্ত্রাসীরা ? আমাদের মেদিনীপুরের অদম্য কিশোরকে পঞ্জাবের ছেলে হিসেবে দেখানো অসহ্য !”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানান, তাঁর সরকার সবসময় ক্ষুদিরাম বসুকে দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে শ্রদ্ধা জানিয়েছে । ক্ষুদিরামের জন্মস্মৃতি বিজড়িত মহাবনী ও সংলগ্ন অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যেই ‘মহাবনী ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ গঠন করা হয়েছে । তাঁর উদ্যোগে মহাবনীতে শহিদের মূর্তি স্থাপন, পাঠাগার সংস্কার, নতুন অডিটোরিয়াম ও কনফারেন্স রুম নির্মাণ, মুক্তমঞ্চ তৈরি, দর্শনার্থীদের জন্য আধুনিক কটেজ এবং ঐতিহ্যবাহী ক্ষুদিরাম পার্কের পুনরুজ্জীবন-সহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে । পুরো এলাকাকে আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে ।

তিনি আরও স্মরণ করিয়ে দেন যে, শুধু জন্মস্থান মেদিনীপুরেই নয়, কলকাতাতেও ক্ষুদিরাম বসুর নামে একটি মেট্রো স্টেশনের নামকরণ করা হয়েছে, যা বাঙালির গৌরবের প্রতীক । উল্লেখ্য, ক্ষুদিরাম বসু ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য নাম । বাল্যবয়সে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনি বীরত্বের নজির স্থাপন করেছিলেন । মুজফ্ফরপুরে বিচারপতি কিংসফোর্ডকে হত্যার উদ্দেশ্যে বোমা নিক্ষেপ মামলায় গ্রেফতার হয়ে মাত্র 18 বছর বয়সে তাঁর ফাঁসি হয় । শতাধিক বছর পরও তাঁর আত্মত্যাগ নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দিয়ে চলেছে । বাংলা ভাষা ও বাঙালির অস্মিতা নিয়ে যখন আন্দোলনে সরব তৃণমূল কংগ্রেস, তখনই বাঙালি শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর দীর্ঘ পোস্টে শ্রদ্ধা নিবেদন ও বলিউডে ইতিহাস বিকৃতির প্রতিবাদ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *