এবার এক বিরাট জালিয়াতি স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পেও ! হার্নিয়ার বদলে অ্যাপেনডিক্সের অস্ত্রোপচার হল টাকা হাতিয়ে নিতে
বেস্ট কলকাতা নিউজ : কখনও রোগী হয়রানি, আবার কখনও রোগীর চিকিৎসার বিলে কারচুপি ! স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রোগী ভর্তি নিয়ে এর আগে এমন একাধিক অভিযোগ উঠেছে বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে । কিন্তু, এবার গুরুতর অভিযোগ উঠল সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্যসাথীর টাকা হাতাতে হার্নিয়ার বদলে রোগীর অ্যাপেনডিক্সের অস্ত্রোপচারের অভিযোগ উঠল পানিহাটির এক বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে ৷ ঘটনার নেপথ্যে রয়েছেন সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসক ! আবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর । অভিযুক্ত চিকিৎসক বিশ্বজিৎ দাসের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে । সূত্রের খবর, ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আগেও একাধিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে । এই ঘটনার পর সেগুলিও সামনে আসতে শুরু করেছে ৷
অন্যদিকে, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে বিপদ আরও বেড়েছে ভুক্তভোগী ওই রোগীর । অ্যাপেনডিক্সের অস্ত্রোপচারের পর থেকে কার্যত বিছানায় শয্যাশায়ী তিনি । অসুস্থতার জেরে না-পারছেন ঠিক মতো চলাফেরা করতে, না-পারছেন কাজে যেতে । ফলে, টান পড়েছে রুটি-রুজিতেও । এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে এর সুবিচার চেয়ে আর্জি জানিয়েছেন তিনি । সেই সঙ্গে, বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে সরব হয়েছেন রোগী । এদিকে অভিযোগ উঠলেও এই নিয়ে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । ফোন করা হলেও ফোন ধরেননি অভিযুক্ত চিকিৎসক বিশ্বজিৎ দাসও । তবে তাঁর বিরুদ্ধে যে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক চিকিৎসক সমুদ্র সেনগুপ্ত ।

জানা গেছে উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির দেশবন্ধু নগরের বাসিন্দা বছর ৪৫ -এর বিশ্বজিৎ দাস । দীর্ঘদিন ধরেই হার্নিয়ার অসুখে ভুগছেন ৷ এর থেকে মুক্তি পেতে মাস ছয়েক আগে পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন । সেই সময় ওই সরকারি হাসপাতালেই কর্মরত ছিলেন অভিযুক্ত চিকিৎসক । অভিযোগ, তাঁর কাছে চিকিৎসার জন্য যাওয়া হলে তিনি ওই রোগীকে ঘোলার মুড়াগাছার বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন । তিনি রোগীকে আশ্বাস দেন স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে হার্নিয়ার অস্ত্রোপচার করিয়ে দেবেন ।
সেই মতো ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তিও হয়ে যান বিশ্বজিৎ । কিন্তু, পরে ওই চিকিৎসক অন্য কথা বলতে শুরু করেন । অভিযোগ, রোগীকে বলা হয় স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে হার্নিয়া অস্ত্রোপচার হলে সরকারি টাকা পাওয়া যাবে না । তাই, ঘুরপথে টাকা পেতে অ্যাপেনডিক্সের অস্ত্রোপচারের নথি দেখানো হবে । চিকিৎসকের কথায় বিশ্বাসও করে নেন ওই রোগী । এরপর যথা সময়ে ওই হাসপাতালেই অস্ত্রোপচার হয় বিশ্বজিতের । অস্ত্রোপচারের পর বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ছেড়েও দেওয়া হয় রোগীকে ।
এদিকে বাড়ি ফেরার কিছুদিন পর থেকেই বিশ্বজিৎ অনুভব করেন, তাঁর হার্নিয়ার জায়গাটি ফুলে রয়েছে । ব্যথাও করছে । এমনকী, অস্ত্রোপচারের অংশ থেকেও রক্তক্ষরণ হচ্ছে ক্রমাগত । এতেই সন্দেহ হয় পরিবারের । সন্দেহ কাটাতে দেরি না-করে ইউএসজি পরীক্ষা করানো হয় রোগীর । আর তাতেই ধরা পড়ে গোটা ঘটনাটি। রিপোর্টে দেখা যায়, হার্নিয়ার কোনও অস্ত্রোপচারই হয়নি । অস্ত্রোপচার হয়েছে অ্যাপেনডিক্সের । রিপোর্ট দেখে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে রোগী ও তাঁর পরিবারের । স্বাস্থ্যসাথীর টাকা হাতাতেই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এমন ঘৃণ্য কাজ করেছে বলে অভিযোগ তাঁদের । এর বিরুদ্ধে সরবও হয়েছেন পরিবারের সদস্যরা ।