ওরা আমায় বাঁচতে দেবে না’, মায়ের বুক কেঁপে উঠল মেয়ের করুন আর্তিতে, অবশেষে রেল লাইনের ধার থেকে উদ্ধার দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রীর মৃতদেহ

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : ওরা আমাকে বাঁচতে দেবেনা’ ! ফোন করে মাকে এমন আশঙ্কার কথা জানানোর কিছু সময় পরেই রেল লাইনের ধার থেকে উদ্ধার দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রীর মৃতদেহ। মৃতার নাম অঙ্গনা হালদার ওরফে পিউ(১৮)। বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের কালনার ধাত্রীগ্রামের দাসপাড়ায়। জিআরপি ঘটনার দিন রাতে কালনা স্টেশন থেকে কিছুটা দূরে ব্যান্ডেল মুখি ডাউন লাইনের ধার থেকে ছাত্রীর ক্ষত বিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করে।ছাত্রীর মৃত্যুর কারণ খুন নাকি আত্মহত্যা তা নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য। যদিও ছাত্রীর মা লিখিত ভাবে জিআরপিকে জানিয়েছে,’কেউ পরিকল্পনা করে তাঁর মেয়েকে হত্যা করেছে।জিআরপি সেই অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে।

ছাত্রীর মা রিংকু হালদার কালনার মধুপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তাঁর দুই মেয়ের মধ্যে অঙ্গনা হালদার ছোট। বড় মেয়ে অস্মিতা হালদার বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক উত্তীর্ণ হয়েছে। ধাত্রীগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তথা রিংকুদেবীর প্রতিবেশী অশোক চৌধুরী জানান, বছর দুই আগে ছোট মেয়ে অঙ্গনাকে শিক্ষকের কাছে পড়াতে নিয়ে যাওয়ার পথে ভয়ংকর বাইক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন রিংকু দেবীর স্বামী জয়দেব হালদার। ওই দুর্ঘটনায় অঙ্গনাও মারাত্মক জখম হয়। দুর্ঘটনাতে জয়দেব বাবু প্রাণ হারান। আর অঙ্গনা প্রাণে বেঁচে গেলেও প্রায় ৭-৮ মাস তাকে কলকাতার হাসপাতালে ট্রমা কেয়ার ইউনিটে ভর্তি থাকতে হয় । অঙ্গনার সুস্থ হতে প্রায় দু’বছর লেগে যায়। চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে মেধাবী মেয়ে অঙ্গনা ফের পড়াশুনার জগতে ফেরে।

মাধ্যমিকে ভাল রেজাল্ট করার পর উচ্চ মাধ্যমিকেও ভাল রেজাল্ট করার স্বপ্ন অঙ্গনার ছিল বলে পঞ্চায়েত প্রধান জানিয়েছেন । রিংকু হালদার এদিন কালনা জিআরপিকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন,’কালনা শহরে এল আই সি অসিসের কাছে একজন প্রাইভেট টিউটরের কাছে তাঁর মেয়ে সপ্তাহে ২-৩ দিন পড়তে যেত। শুক্রবার বিকাল ৫ টার সময় সেই টিউটরের কাছে মেয়েকে পৌছে দেন। শিক্ষক মহাশয় ছুটি দিয়ে দিলে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরবেন বলে পাশের একটি বাড়িতে তিনি অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু অন্যান দিনের থেকে ওইদিন ১ ঘন্টা আগে ছুটি হয়ে গেলেও তাঁর মেয়ে তাঁকে কিছু না জানিয়ে একাকি সন্ধ্য ৬ টা ৫ মিনিট নাগাদ শিক্ষকের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় । পরে মেয়ের ছুটি হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়ার পর মেয়েকে দেখতে না পেয়ে তিনি তাঁর মেয়ের খোঁজ শুরু করেন। তারই মধ্যে সন্ধ্যা ৬ট ৫২ মিনিট নাগাত তাঁর মেয়ে তাঁকে ফোন করে। ফোন করে শুধু বলে,“ওরা আমাকে বাঁচতে দেবে না মা“।

রিংকুদেবী জিআরপিকে স্পষ্ট জানিয়েছেন, কালনা স্টেশন থেকে দূরে রেল লাইনের পাশে তাঁর মেয়ের মৃতদেহ যে ভাবে পড়েছিল তা দেখে তিনি নিশ্চিৎ হয়েছেন ,’তাঁর মেয়ের পক্ষে রাতের অন্ধাকারে ওই জায়গায় যাওয়া সম্ভব নয় । তাঁর মেয়েকে কেউ বা কারা পরিকল্পনা করে হতা করেছে। ’মৃতার কাকাও শরবিন্দু হালদারও একই ভাবে দাবি করেন ,তাঁর ভাইজী অঙ্গনা দৃঢ়চেতা মেয়ে ছিল। সে আত্মহত্যা করতে পারে না । ভাইজীর মৃত্যর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি করেছেন মৃত ছাত্রীর কাকা। অভিযোগ পাওয়ার পরেই নড়ে চড়ে বসে কালনা জিআরপি। স্টেশন চত্ত্বরের সিসিটিভি ফুটেছ খতিয়ে দেখা শুরু হয়।সেই ফুটেছে ছাত্রীকে শুক্রবার সন্ধ্যায় স্টেশনে একাই ঘুরতে দেখা যায় । তার সঙ্গে অন্য কারুর থাকার ছবি সিসিটিভিতে ধরা পড়েনি। কালনা জিআরপির ওসি রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে হাসলে ছাত্রীর মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ মর্গে এদিন ছাত্রীর মৃতদেহের ময়না তদন্ত হয় ।

এদিকে জগদ্ধাত্রী পুজোর মধ্যে এলাকার মেধাবী ছাত্রীর এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় ধাত্রীগ্রামের বাসিন্দারাও শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন। অঙ্গনাদের বাড়ির কাছের পুজোতেও বইছে বিষাদের সুর । রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ এবং কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগ এদিন মৃতা ছাত্রীর মায়ের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান। পাশে থাকার আশ্বাস দেন। মন্ত্রী বলেন, “দুঃখ জনক ঘটনা। জিআরপি ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত করছে।আমরা চাই মৃত্যুর রহস্য উন্মোচিত হোক ।

এদিকে, ঘটনার পর তদন্তে নেমে এখনও পর্যন্ত তেমন ‘ক্লু’ হাতে আসেনি পুলিশের। তবুও হাল ছাড়েনি পূর্ব বর্ধমানের কালনা জিআরপি-পুলিশ। দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া কালনার অঙ্গনা হালদারের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের মরিয়া চেষ্টায় তদন্তকারীরা। তবে পুলিশি তদন্তে হতাশ মৃতের পরিবার। তাঁরা CID কিংবা CBI তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *