চরম অবহেলায় পড়ে বিভূতিভূষণের হাতে তৈরি লাইব্রেরি, চিরতরে বন্ধের আশঙ্কায় এলাকার স্থানীয়রা
বেস্ট কলকাতা নিউজ : সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বসিরহাটের যোগ তাঁর বিবাহ সূত্রে ৷ ১৯১৭ সালে বসিরহাটের পানিতর গ্রামে প্রথম বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি ৷ কিন্তু, বিয়ের এক বছরের মধ্যে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম স্ত্রী গৌরী বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কিন্তু, বসিরহাটের মায়া ত্যাগ করতে পারেননি সাহিত্যিক ৷ স্ত্রী গৌরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের টানে ইছামতীর পাড়ে বই পড়ার আসর জমিয়ে তুলেছিলেন ৷ যেখানে আনাগোনা ছিল দুই বাংলার বইপ্রেমীদের ৷
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৮ সালে সেই জায়গায় সাহিত্যিকের স্মৃতিতে ‘বিভূতিভূষণ গ্রামীণ পাঠাগার’ তৈরি করে রাজ্য সরকার ৷ বর্তমানে সেই লাইব্রেরির দৈন্যদশা ৷ বাইরের দেওয়ালে লেপা রয়েছে ঘুঁটে ৷ আর ভিতরে অন্ধকার লাইব্রেরিতে ধুলোর আস্তরণ, মাকড়সার জাল ও মরচে ধরা জানালা ৷ বিভূতিভূষণের স্মৃতি বিজড়িত এই লাইব্রেরির সংস্কার ও তা চালু করার দাবি তুললেন ইছামতীর পাড়ের বাসিন্দারা ৷ উল্লেখ্য, প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর, তাঁর স্মৃতিতেই বই পড়ার আসর তৈরি করেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ পরাধীন ভারতের অবিভক্ত বাংলার সাহিত্য প্রেমীরা সেখানে আসতেন ৷ বই পড়া ও নিজেদের মত আদানপ্রদান চলত ৷ দেশভাগের পর, ওপার বাংলার মানুষজনের সেখানে আসা বন্ধ হয়ে যায় ৷ তবে, এই বঙ্গের মানুষজন নিয়মিত বিভূতিভূষণের বই পড়ার আসরে আসতেন ৷

পরবর্তী সময়ে ১৯৭৮ সালে তৎকালীন রাজ্য সরকারের উদ্যোগে সেখানে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে পাঠাগার তৈরি করা হয় ৷ কিন্তু, সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে সেই লাইব্রেরি বন্ধ হয়ে যায় ৷ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আগাছায় ঢেকেছে চারিদিক ৷ গজিয়েছে কচু-বন ৷ লাইব্রেরির পলেস্তেরা খসে পড়েছে ৷ খয়ে গিয়েছে ইট ৷ বর্ষায় ছাদ চুঁইয়ে পড়ে জল ৷ এতে ভিতরে থাকা অসংখ্য বই নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে ৷ লাইব্রেরির বারান্দার পিলারগুলিও প্রায় ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে ৷ তার উপর স্থানীয় কয়েকজন লাইব্রেরিতে ওঠার সিঁড়ির পাশে ঘুঁটে লেপেছে ৷
ভাঙা জানালা দিয়ে ভিতরে উঁকি দিলে আরও করুণ ছবি ফুটে উঠবে বিভূতিভূষণের স্মৃতি বিজড়িত এই লাইব্রেরির ৷ মাকড়সার জাল, টেবিল-চেয়ার, বইয়ের সেল্ফ ও সারি দিয়ে সাজানো বইয়ে ধুলোর মোটা আস্তরণ পড়ে আছে ৷ ভিতরে পড়ে আছে পুরনো ক্যালেন্ডার ও জাতীয় পতাকা ৷ সবের উপরেই ধুলো জমেছে ৷ এই লাইব্রেরির বাড়িটির মধ্যেই রয়েছে ভারতীয় ডাকঘরের একটি ছোট্ট শাখা (সাব পোস্ট অফিস) ৷ সেটিও ধুঁকছে ৷ স্থানীয়দের আশঙ্কা, যেকোনও দিন এই ডাকঘরটিও বন্ধ হয়ে যেতে পারে ৷ পোস্টমাস্টার নবনীতা সরদার নিয়মিত ডাকঘরটি খুললেও, তার পরিকাঠামো খুবই দুর্বল ৷ মাথার উপর ছাদের অবস্থা ভালো নয় ৷ মাকড়সার জাল আবর্জনায় চারপাশটা ভর্তি ৷ পোস্টমাস্টার কোনোরকমে পরিষ্কার করে বিপদ মাথায় নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ৷