দিনে মাত্র ৮৪ টাকা! কিভাবে বাঁচব?’ সরকারকে প্রশ্ন ঘরহারা মণিপুরবাসীর

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : ২০২৩ সালের মে মাস থেকে হিংসাদীর্ণ মণিপুর। অশান্তির আগুনে ছারখার হয়ে গিয়েছে হাজার হাজার মানুষের বাড়িঘর। দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে দিন-রাত কাটছে আশ্রয় শিবিরে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার আশার আলো দেখালেও এখনও ‘শান্তি’ ফেরেনি মণিপুরে। ৬০ হাজারেরও বেশি গৃহহীন মানুষ বেঁচে থাকার লড়াই করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

এর মধ্যেই রাজ্য সরকারের এক সিদ্ধান্ত ঘিরে ক্ষোভ চরমে উঠল আশ্রয় শিবিরে থাকা মানুষজনের। কারণ বর্তমানে সরকার খাদ্য, রেশন এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রীর সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। তার পরিবর্তে সরকারের ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার প্রকল্পের অধীনে মাথাপিছু মাত্র ৮৪ টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত সপ্তাহে ঘোষিত এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন আম জনতা। আশ্রয়শিবিরে থাকা ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষের উপর এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়েছে বলে খবর। বুধবার ইম্ফল পূর্বের সাজিওয়ায় আশ্রয়শিবিরে থাকা মোট ৪৪৬ জন হেঁটে মহকুমা অফিসে যান এবং সরকারের নতুন ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার প্রকল্পের অধীনে বিতরণ করা মোট ১১ লক্ষ ৭৪ হাজার ৩২০ টাকা ফিরিয়ে দেন।

সরকারি কর্মকর্তাদের অবশ্য দাবি, এই সরাসরি অর্থ প্রদান ব্যবস্থা ত্রাণ বিতরণে ‘স্বচ্ছতা’ আনবে। ডিসেম্বরের মধ্যে ৬০ হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষকে ধাপে ধাপে পুনর্বাসন দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে রাজ্য সরকার। বিক্ষোভকারীদের দাবি, এখন পর্যন্ত কোনও কাজ হয়নি। সরকার এই দাবিতে সাড়া না দিলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। সরকারি সূত্রে খবর, প্রত্যেক ব্যক্তিকে মাসে ২ হাজার ৫২০ টাকা দেয় প্রশাসন। অর্থাৎ দৈনিক ৮৪ টাকা। বিক্ষোভে উপস্থিত এক ব্যক্তি বলেন, ‘৮৪ টাকায় একজন মানুষের দৈনিক জীবনযাপন করাই সম্ভব নয়। এটা অত্যন্ত অপমানজনক। দীর্ঘদিন ধরে পুনর্বাসনের আশ্বাস দিচ্ছে সরকার। তবে এখন পর্যন্ত এবিষয়ে কোনও পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি।’ পুনর্বাসনের জন্য প্রশাসনকে ১০ দিনের সময় বেধে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধরা।

এসডিও অফিসে এই মর্মে চিঠি দিয়েছেন তাঁরা। একইসঙ্গে জানিয়েছেন, সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে বিক্ষোভ আরও জোরালো হবে। কোইজাম শরৎ মেইতেই নামে এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘বিক্ষোভের সময় কোনও ঘটনা ঘটলে সরকারকে তার দায় নিতে হবে।’আশ্রয় শিবিরে থাকা এক চল্লিশোর্ধ্ব মহিলা বলেন, ‘আমরা ৮৪ টাকায় কিভাবে বাঁচব? আজকাল দিনে ১০০ টাকাতেও চলে না, এই টাকায় আমাদের চাল, খাদ্যসামগ্রী কিনতে হচ্ছে। পরিবারের শিশুদের খাবার, বয়স্ক ও অসুস্থদের ওষুধ কিনতে হচ্ছে। এভাবে বাঁচা যায় না।’ অপর এক ব্যক্তি জানান, ‘ইতিমধ্যে বহু পরিবার খাদ্য সংকট এবং অসুস্থদের জন্য চিকিৎসা সহায়তার অভাবে ভুগছে। বাড়িঘর বলে আর কিছু নেই আমাদের। হিংসার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে সবকিছু। এই অবস্থায় দিনে ৮৪ টাকা পেলে হাতে কিছুই থাকে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *