ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় মামলা পুনর্বিচারের দাবীতে বাঁকুড়ার ছাতনায় ঐতিহাসিক শোকসভা ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালিত হল ন্যায়বিচার মঞ্চের পক্ষ থেকে
নিজস্ব সংবাদদাতা: ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ফাঁসির দিনেই বাঁকুড়ার ছাতনা অঞ্চলে কনভেনর ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামীর উদ্যোগে অভিনব ভাবে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করলো “ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় মামলা পুনর্বিচার মঞ্চ” বা “ন্যায়বিচার মঞ্চ” । ধনঞ্জয় মামলা পুনর্বিচারের দাবীতে এদিন সকাল থেকেই মঞ্চের সদস্যরা লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি গণস্বাক্ষর অভিযান পালন করলেন । এরপর প্রায় তিনশতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে ছাতনা থানার নিকটেই বিশিষ্ট সাধক কবি বড়ু চণ্ডীদাসের আরাধ্যা দেবী বাঁশুলী মায়ের আদি মন্দিরে সকাল ঠিক এগারোটার সময় ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় এবং হেঁতাল পারেখের আত্মার শান্তি কামনায় একটি বিশেষ পূজা এবং যজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ।

এরপর এদিন ধনঞ্জয়ের গ্রাম কুলডিহির নিকটবর্তী কামারকুলি মোড়ে একটি ঐতিহাসিক প্রতিবাদী স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। মঞ্চের কনভেনর ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামী বলেন তথ্যপ্রমাণ এবং মানুষের বিশ্বাস একটি কথাই বলছে “বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে”, অর্থাৎ ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় নিরপরাধ ছিলেন । শুধুমাত্র দরিদ্র পুরোহিত ঘরের সন্তান ছিলেন বলেই হেঁতাল পারেখ হত্যাকাণ্ডে আসল অপরাধীকে আড়াল করার জন্যই বলির পাঁঠা করা হয়েছে হতভাগ্য ধনঞ্জয়কে । অনেক চেষ্টা করে আমি ধনঞ্জয়ের বিরুদ্ধে প্রথম এফ.আই.আর. কপি থেকে ফাঁসি হওয়া পর্যন্ত এই কেসের সমস্ত গুরুত্বপূর্ন নথি সংগ্রহ করেছি, যেখানে ছত্রে ছত্রে পরস্পর বিরোধী বয়ান ও তথ্য বিকৃতির প্রমাণ রয়েছে । প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্যের চক্রান্তে কোনরকম প্রত্যক্ষ প্রমাণ ছাড়া বিচারের নামে প্রহসন করে খুন করা হয়েছে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়কে ।
কনভেনর ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামী আরও এই মামলার পুনর্বিচার হয়ে ধনঞ্জয়ের পরিবারকে জাস্টিস না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের বিচার ব্যবস্থাকে বার বার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে । আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী দিনে কলকাতার কোর্ট চত্বরে এবং বাঁকুড়ার ছাতনায় কামারকুলি মোড়ে ধনঞ্জয় বাবুর একটি আবক্ষমূর্তি স্থাপন করবো । সেই সাথে আমরা গণস্বাক্ষর করে প্রশাসনের কাছে দাবী তুলবো ধনঞ্জয় বাবুর ডাক নাম অনুযায়ী ওনার জন্মভিটা কুলডিহি গ্রামের আরেকটি নতুন নাম সংযোজন হোক “ধনাডিহি” । খুব তাড়াতাড়ি আমাদের ন্যায়বিচার মঞ্চ প্রেসক্লাবে প্রেসমিট করে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি অবিচারের সমস্ত তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরব। পুনর্বিচার মঞ্চের কো কনভেনর অনামিকা মন্ডল বলেন আজ ধনঞ্জয় কোন ব্যক্তি নন, উনি অত্যাচারিত হতভাগ্য মানুষদের প্রতীক । আগামীদিনে ধনঞ্জয়ের মত পরিণতি যাতে আর কারো না হয় সেটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য । রাজ্য কমিটির সদস্য বঙ্কিম মিশ্র ও বিধান দত্ত বলেন শুধু ধনঞ্জয় নয় যে কোন অত্যাচারিত নিপীড়িত মানুষের কন্ঠ হিসেবে আন্দোলন করছে আমাদের মঞ্চ । যতদিন না আমরা সবাইকে জাস্টিস দিতে পারছি ততদিন এই লড়াই চলবে । বাঁকুড়া জেলার সদস্য শঙ্কর চক্রবর্তী, স্বপন মন্ডল এবং কল্যাণ দে বলেন একটি ত্রুটিহীন বিচার ব্যবস্থা ও অপরাধমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা স্থাপন করা আমাদের মঞ্চের প্রধান উদ্দ্যেশ্য । ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় মামলা পুনর্বিচার মঞ্চের পক্ষ থেকে দেবদুলাল মুখার্জি, ইসরাফুল খান, আব্দুল হামিদ খান, রীনা খাঁ, সুস্মিতা বাউরি, নমিতা গোস্বামী সহ একাধিক জেলা নেতৃত্ব ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ উপস্থিত ছিলেন ।