নবান্নকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে ১২ জন পর্যবেক্ষক নিয়োগ, কমিশনের বেনজির পদক্ষেপে চরম ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকার
বেস্ট কলকাতা নিউজ : নির্বাচন কমিশন ও রাজ্যের সংঘাত তুঙ্গে ৷ রাজ্য সচিবালয় নবান্নকে কার্যত অন্ধকারে রেখেই একতরফাভাবে রাজ্যের ১২ জন আইএএস অফিসারকে ইলেক্টোরাল রোল অবজার্ভার বা নির্বাচনী তালিকা পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ করার অভিযোগ উঠেছে কমিশনের বিরুদ্ধে । আর নবান্নকে না জানিয়ে কমিশনের এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকার ৷
সাধারণত নির্বাচনের সময় বা ভোটার তালিকা সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায় পর্যবেক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিশনের তরফে রাজ্য সরকারের কাছে অফিসারদের নামের তালিকা বা প্যানেল চাওয়া হয় । সেই তালিকা থেকেই বেছে নেওয়া হয় পর্যবেক্ষকদের । এটিই দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক রীতি ও সৌজন্য । কিন্তু এবার সেই প্রথাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে রাজ্যকে না জানিয়েই সরাসরি আমলাদের নিয়োগপত্র পাঠানো হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর । কমিশনের এই আকস্মিক ও একতরফা সিদ্ধান্তে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে রাজ্যের প্রশাসনিক মহলে, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই নবান্নের অন্দরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে ।

নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের তরফে রাজ্যের ১২ জন পদস্থ আইএএস আধিকারিককে ভোটার তালিকা সংশোধনের পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে । অথচ, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ বা রাজ্য সরকারের কর্মী বর্গ দফতরের কাছে কমিশনের তরফে এই নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও আনুষ্ঠানিক চিঠি বা প্রস্তাব পৌঁছয়নি । রাজ্যের দাবি, নির্বাচন কমিশন যদি রাজ্যের অফিসারদের তাদের কাজে লাগাতে চায়, তবে তা রাজ্যকে জানিয়ে করাই দস্তুর । রাজ্য সরকার সাধারণত অফিসারদের কাজের চাপ এবং গুরুত্ব বিবেচনা করে একটি তালিকা কমিশনের কাছে পাঠায় । অভিযোগ, এবার সেই প্রক্রিয়ার ধার ধারেনি কমিশন ।
এই ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর আঘাত এবং প্রশাসনিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন হিসেবেই দেখছে রাজ্য প্রশাসন । নবান্নের এক শীর্ষ আধিকারিক এই প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্পষ্ট বলেন, “এটা অত্যন্ত একটা গুরুতর বিষয় । রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা মুখ্যমন্ত্রীর। যেভাবে রাজ্য প্রশাসনকে অগ্রাহ্য করে এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা একরকম নজিরবিহীন ।” ওই আধিকারিকের এই মন্তব্যে স্পষ্ট যে, রাজ্য সরকার কমিশনের এই ভূমিকাকে মোটেই সহজভাবে নিচ্ছে না । প্রশাসনের শীর্ষ মহলের মতে, রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের অধীনেই সমস্ত আইএএস অফিসাররা কর্মরত থাকেন । তাঁদের পোস্টিং বা ডিউটি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে রাজ্যের সম্মতি নেওয়া বাধ্যতামূলক না হলেও, সৌজন্যমূলক আলোচনার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের । কিন্তু এক্ষেত্রে সেই ন্যূনতম সৌজন্যটুকুও দেখানো হয়নি বলে অভিযোগ ।

