পাখিদের প্রাণ ক্রমশ বিপন্ন হচ্ছে রবীন্দ্র সরোবরে রাতের আলোকসজ্জায় ! প্রতিবাদে সরব হল পরিবেশকর্মীরা
বেস্ট কলকাতা নিউজ : দুষণময় শহরে একটু মুক্ত বাতাস পেতেই অসংখ্য মানুষ ছুটে যান রবীন্দ্র সরোবরে । আর সেখানেই সৌন্দর্যায়ন ও নিরাপত্তার তাগিদে গোটা সরোবর জুড়ে বসানো হয়েছে আলো ৷ সেই আলোয় প্রাণ ওষ্ঠাগত পাখিদের । যার ফলে রাত পর্যন্ত শোনা যায় পাখিদের কোলাহল । সার্বিকভাবেই যা জীববৈচিত্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব বলেই অভিযোগ তুলছেন পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী থকে পাখিপ্রেমীরা । তবে সরোবর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভলপমেন্ট অথরিটি জানাচ্ছে, বিষয়টি কঠিন । মানুষের নিরাপত্তার দিকটাই বেশি গুরুত্ব দিতে হয় । বিরাট এলাকাজুড়ে জলাশয়, গ্রিন জোন । যেখানে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ । সুস্থ থাকার জন্যই সকাল থেকে রবীন্দ্র সরোবর চত্বরে হাজির হন বহু মানুষ । সেখানে তাঁরা শরীর চর্চা করেন । পাশাপাশি একাধিক ক্লাব আছে, যারা নানা ধরনের খেলা করে থাকে ওখানে । তবে এইসব মিলিয়ে যেসমস্ত মানুষ দিনভর আসছেন সন্ধ্যার পর থেকে তাদের নিরাপত্তা দিতেই সরোবর জুড়ে বিভিন্ন রাস্তা, বিভিন্ন অংশ আলোকিত করা হয়েছে ।

আর সেই আলো রাত বাড়লে কিছুটা নিভিয়ে দেওয়া হলেও বাকি বিভিন্ন অংশে জ্বলে থাকে । ফলে সেই আলোর তীব্রতায় রাত পর্যন্ত পাখিরাও জেগে থাকে । তাদের মধ্যে ক্লান্তি এলেও বুঝে উঠতে পারে না তারা যে রাত হয়ে গিয়েছে । তাদের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠছে ৷ বদলে যাচ্ছে জীবনযাত্রা ৷ অসুস্থ হয়ে পড়ছে তারা । কেউ কেউ বাসা বদল করে ফেলছে ।
এদিকে সরোবর রক্ষায় লাগাতার আন্দোলনের অন্যতম মুখ সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আমরা পাখিদের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে আবেদন করেছিলাম । কেন সরোবর সন্ধ্যার আগেই বন্ধ হবে না? রাতে আলো জ্বালানোর প্রয়োজন কোথায় । আমরা যেমন নিজেদের স্বাস্থ্য দেখছি, তেমন প্রকৃতি-সরোবরের জীববৈচিত্র্য সবটাই রক্ষা করতে হবে । রক্ষা করতে হবে পাখিদেরও । এই আলোর জেরে তাদের জীবনে অন্ধকার নেমে আসছে । তাদের ঘুম চলে গিয়েছে । পাখিরা অসুস্থ হচ্ছে । বাসা বদল করে ফেলছে । কিছু মানুষের জন্য সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত সরোবর খুলে রাখার জন্যই এই ঘটনা ঘটে চলেছে । সেটা কোনোভাবে বন্ধ করা হোক ।” একই ভাবে পাখিপ্রেমী সুদীপ ঘোষ বলেন, “যেকোনও কৃত্রিম কিছু হলে সেটা প্রভাব পরে পাখিদের উপর । প্রাকৃতিকভাবে দিনে সূর্য রাতে চাঁদ তো আছেই । সরোবর সন্ধ্যায় বন্ধ করে দিলেও কেন সেখানে আলো জ্বালিয়ে রাখা হয়, তার কোনও অর্থ আমার কাছে স্পষ্ট নয় । এই বছরে সরোবরে ১০৬ রকমের পাখি এসেছে । গোটা দেশে ১৩৪৫ রকমের পাখির মধ্যে ১০৬ রকম পাখি এই সরোবরে এসেছে, যেটা সাধারণ কথা নয় ।

