‘বাবা ড্রামের মধ্যে রয়েছে’, ছয় বছরের মেয়ে এমনটাই বলেছিল প্রতিবেশীদের, মিরাটের নেভি মার্চেন্ট খুনে সামনে এল এমনি চাঞ্চল্যকর এক তথ্য
বেস্ট কলকাতা নিউজ : নেভি মার্চেন্ট অফিসার সৌরভ রাজপুতের নৃশংশ খুনে শিউরে উঠেছে উত্তরপ্রদেশের মিরাট। সৌরভের দেহ ১৫ টুকরো করে একটি ড্রামের মধ্যে রেখে সেটিকে সিমেন্ট দিয়ে ভরে ফেলেছিলেন স্ত্রী মুসকান রাস্তোগি এবং তাঁর বন্ধু সাহিল শুক্লা। কিন্তু সৌরভের মা জানিয়েছেন তাঁর ছয় বছরের নাতনি প্রায়শই প্রতিবেশিদের বলত, ”বাবা ড্রামের মধ্যে রয়েছে”। এর থেকেই আন্দাদ করা যায় মায়ের ঘৃণ্য অপরাধ সমন্ধে ওয়াকিবহাল ছিল শিশুটি।

পুলিশ জানিয়েছে, মেয়ের জন্মদিন পালন করতে গত ৪ মার্চ লন্ডন থেকে বাড়িতে ফেরেন সৌরভ। এরপরেই তাঁকে মুসকান এবং সাহিল মিলে খুন করেন। এরপর দেহটিকে ১৫ টুকরো করে একটি ড্রামের মধ্যে রেখে সেটিকে সিমেন্ট দিয়ে ভরে ফেলা হয়েছিল। ছেলের মৃত্যুতে মর্মাহত মা রেণু দেবী বলেন, ”ওঁরা আমার ছেলেকে মেরে ঘুরতে চলে গিয়েছিল। যে বাড়িতে ভাড়া থাকত সেই বাড়ি খালি করতে বলেছিল বাড়িওয়ালা। জানিয়েছিলেন ঘরটির সংস্কার করতে হবে। দু’জনে বাড়ি ফিরলে বাড়িওয়ালা লোক পাঠিয়ে ঘর খালি করাচ্ছিলেন। কিন্তু কেউই ড্রামটিকে সরাতে পারেননি। জিজ্ঞেস করায় মুসকান বলেছিল ড্রামের মধ্যে পুরনো জিনিস রয়েছে।”

রেণু দেবী আরও জানান, ড্রামের ঢাকনা সরাতেই সত্যটা সামনে আসে। পুলিশ আসাক আগেই মুসকান মায়ের কাছে চলে গিয়েছিলেন। মুসকানের মা কবিতা রাস্তোগি জানিয়েছিলেন, মুসকান তাঁদের কাছে খুনের কথা স্বীকার করতেই তাঁরা পুলিশের কাছে যান। যদিও কবিতার কথা মানতে চান না রেণু দেবী। তাঁর অভিযোগ, মুসকানের বাবা-মা পুলিশকে ভুল বোঝাতে চাইছেন। তাঁরা অনেক আগে থেকেই এই খুনের ব্যাপারে জানতেন। তাঁরা উকিলের সঙ্গে শলাপরামর্শ করেই পুলিশের কাছে গিয়েছেন। চোখের জল মুছতে মুছতে তাঁর দাবি, মুসকাল এবং তাঁর পরিবার ও সাহিলের ফাঁসি চাই।

তাঁর নাতনি এ বিষয়ে কিছু জানত কি না জিজ্ঞেস করায় রেণু দেবী বলেন, ”সে হয়তো কিছু দেখেছে। কিছু লোক বলেছিলেন যে সে বলছিল, ‘বাবা ড্রামের মধ্যে আছে’। সে নিশ্চয়ই কিছু দেখেছিল। সেই কারণেই তাঁরা তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।” পুলিশ সূত্রে খবর, ২০১৬ সালে সৌরভ ও মুসকান বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রেমের সম্পর্ক পরিণতি পাওয়ায় খুব খুশি ছিলেন দু’জনে। স্ত্রীর সঙ্গে আরও সময় কাটানোর জন্য মার্চেন্ট নেভির চাকরি ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু পারিবারিক অশান্তির কারণে এরপর বাড়ি ছেড়ে মুসকানকে নিয়ে ভাড়াবাড়িতে থাকতে শুরু করেন সৌরভ। ২০১৯ সালে ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন মুসকান। কিন্তু সেই সুখের মুহূর্ত বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দিন কয়েক পরেই সৌরভ জানতে পারেন, তাঁর বন্ধু সাহিলের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত মুসকান। সেই সম্পর্ক ঘিরে অশান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছয়। ডিভোর্সের পথে এগিয়েও, সন্তানের কথা ভেবে পিছিয়ে আসেন সৌরভ। ফের নেভির চাকরি নিয়ে ২০২৩ সালে ভিন দেশে চলে যান। মেয়ের ছ’বছরের জন্মদিন উপলক্ষে ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরেন সৌরভ। এর পরেই তাঁকে খুন করেন মুসকান এবং সাহিল।
