বারাসাত জেলা হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতির বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা এক অসহায় মায়ের মুখে
প্রতিবেদন : আমি সুমিতা সেনগুপ্ত, মধ্যমগ্রাম শ্রীনগর কালীবাড়ি রোডের ৭ ন্ং ওয়ার্ডের বাসিন্দা, থানা ও পোস্ট অফিস : মধ্যমগ্রাম, উত্তর ২৪ পরগণা। আমি একজন বিধবা মহিলা, এক মেয়েকে নিয়ে থাকি। আমার মেয়ে ইন্দ্রানী সেনগুপ্ত পেশায় একজন সাংবাদিক। গত ১২/০৭/২০২৪ এ আমার মেয়ে বাম তলপেটে, কোমরে আর বাম পায়ে অসহ্য ব্যাথা ও পিরিয়ডসের অত্যাধিক রক্তপাতের উপশম চেয়ে বারাসাত জেলা হাসপাতালে গেলে এমার্জন্সি বিভাগ থেকে কোনো রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা না করেই পেট ব্যাথা শুনেই মেয়েকে ফিমেল সার্জিকাল ওয়ার্ডে ভর্তি করে নেয় দুপুর প্রায় ৩টে নাগাদ, বেড নং ৩৩। অসহ্য যন্ত্রনার জন্য কয়েকটা ইনজেকশন দিলেও তার কোনো যথাপোযুক্ত চিকিৎসা শুরু করে না। মেয়ে আমার যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকে। তারপর কোনো ডাক্তার দেখতে আসে না, রাত সারে ৮টা নাগাদ সার্জিকাল এর ডাক্তার এসে সিমটম শুনে বলেন তোমাকে এখানে কে ভর্তি করিয়েছে? তোমার যা সমস্যা তাতে তোমাকে ইমিডিয়েট গাইনি বিভাগে ভর্তি স্থানান্তরিত করতে হবে। এবং সেই চিকিৎসক নিজেও ছি ছি করে বললেন যে এমার্জেন্সি থেকে কি ডগীর ডাক্তার তোমাকে এখানে পাঠালো? এখানে তোমার কোনো চিকিৎসা করার নেই, আমি লিখে রেফার করে দিচ্ছি যাতে তোমাকে গাইনি ডাক্তার এসে দেখে যান এবং সেই ওয়ার্ডে শিফট করে নেয়। কিন্তু তিনি বলে যাওয়ার পরেও কোনো গাইনি ডাক্তার দেখতে আসে না। আমি বার বার নার্সদের কাছে জিজ্ঞেস করলে বলে ফোন করা হয়ে উনি আসছেন। এই আসছেন আর আসবেন শুনতে শুনতে রাত প্রায় ১২টা বাজে। তখনও আমার মেয়ে যন্ত্রনায় ছটফট করছে, প্রচুর পরিমাণে ব্লাড ভাঙছে। আমি মা হয়ে সন্তানের সেই কষ্ট কি করে চুপচাপ দেখি, তাই আবারও নার্সদের কাছে গেলাম ডাক্তার কখন আসবে জানতে। তাতে আমাকে নার্সরা যা নয় তাই বলে মুখ করলেন, আর বললেন আজ আর গাইনি ডাক্তার আসবে না। তিনি নাকি বাড়ি চলে গেছেন।
এদিকে আমি অনুরোধ করায় তারা বলছেন আপনার মেয়ের জন্য কি এখন আমরা ডাক্তারের বাড়ি থেকে ডাক্তারকে তুলে আনবো? এটা কি আদৌ একজন মুমূর্ষ রুগীর জন্য সঠিক স্বাস্থ্য পরিষেবা? এর আগেও এই হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে, কিন্তু তাও আমরা ভরসা করে এখানেই আসি সুচিকিৎসার জন্য, এই কি তার নমুনা। রাত ১-১:৩০ নাগাদ যখন আর সহ্য করতে না পেরে যন্ত্রনায় চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে তখন একজন অল্প বয়সী ছেলে গাইনি ডাক্তার হিসেবে এসে মেয়েকে দেখে কিছু ইনজেকশন আর ওষুধ লেখেন। কিন্তু সারা বারাসাত খুঁজেও সেই ওষুধ পাওয়া যায় না, আমাদের চার্চের ফাদার অনেক কষ্টে খুঁজে সেই মধ্যমগ্রাম থেকে কিছু ওষুধ আনেন, কিন্তু দরকারি ইনজেকশন গুলো পাওয়া যায় না। সেটা ডাক্তারকে জানানো হলে বলেন না পাওয়া গেলে কিছু করার নেই, কাল সকালে যদি পান তখন দেওয়া হয়। এটা কি চিকিৎসকের কথা হতে পারে? আর আমি বার বার নার্সদের বেকার বিরক্ত করেছি বলে একজন ডাক্তার নার্সদের বলছেন এই পাগল মহিলার কথা শুনবেন না। মেয়েকে বলছে ওরকম যন্ত্রনা নাকি মুখ বুঝে সহ্য করতে হয়। আপনার মেয়ের চিৎকারের জন্য কি আমরা একটু ঘুমাতে পারবো না। আমার প্রশ্ন, একজন গাইনো পেসেন্টকে কি করে সার্জিকাল বিভাগে ভর্তি করা হয়? এমতাবস্থায় কোথায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? নার্স, ডাক্তাররা কি হাসপাতালে রাতের ডিউটি ঘুমানোর জন্য করে নাকি রোগীকে প্রপার স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার জন্য মাইনে পায়? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সবটা বার বার ফোন করে জানানোর পরেও তারা নিরব ছিল কেন? হাসপাতাল আধিকারিকরা সেই সময় কোনো সহযোগিতা তো করলেনই না উপরন্তু পরের দিন মানে ১৩/০৭/২০২৪ এ মেয়েটাকে আধমরা অবস্থায় গাইনিতে শিফট না করে ডিসার্চ দিয়ে দিলেন কোন যুক্তিতে? একজন সাংবাদিক কর্মী, গুরুত্বপূর্ণ পেশায় আছে জানা স্বতেও তার সাথে যদি এমন দুরব্যবহার করা হয়, এমন জঘন্য চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয় তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য পরিষেবা কতটা ভয়ানক হচ্ছে বলাই বাহুল্য। সরকারি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ থেকে বিভিন্ন আধিকারিক, ডাক্তার, নার্স এরা কি শুধুই মাস গেলে মাইনে নেওয়ার জন্য প্রতিদিন হাজিরা দেয়? আমি এক বিধবা মা তার অসুস্থ সন্তানের সাথে হওয়া এই অমানবিক ঘটনা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার এই অবনতির বিচার চাই। আশাকরি আপনারা সবাই সহযোগিতা করবেন যাতে আর কোনো মা বা অসুস্থ ব্যক্তি এই রকম অবহেলিত না হয় সরকারি হাসপাতালগুলোতে। বর্তমানে আমার মেয়ে মধ্যমগ্রাম মাতৃসদন হাসপাতালের গাইনোকোলজিস্ট ডা: মহুয়া মন্ডলের হাতে চিকিৎসাধীন রয়েছে। হাসপাতালের এই অবনতি ও কুপরিষেবা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ করায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেখানে আমার মেয়েকে মানসিক রুগি বলে আক্ষায়িত করে মন্তব্য উপস্থাপন করেছেন, এর কি বিচার হবে? ধন্যবাদান্তে — সুমিতা সেনগুপ্ত। মধ্যমগ্রাম