বিধায়ক হাতেনাতে ধরলেন পুলিশকর্তার ‘তোলাবাজ’ গাড়িচালককে, চমকে যাবেন নাটকীয় পাকড়াও-পর্ব জানার পরে!

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : এক পুলিশকর্তার ‘তোলাবাজ’ গাড়িচালককে হাতে-নাতে ধরে ফেললেন রাজ্যের শাসকদলেরই এক বিধায়ক। পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। ওই তোলাবাজ গাড়িচালককে ধরতে তিনি তৎপর হয়েছিলেন। পূর্বস্থলী থানার আইসি-র সেই গাড়িচালক গোপাল দাসকে ‘পাকড়াও’ করে পুলিশের হাতেই তুলে দিয়েছেন বিধায়ক। সেই সঙ্গে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করতেও পুলিশের আধিকারিকদের আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

বিধায়ক ও এলাকার মানুষজনের কথায় অনুযায়ী, পূর্বস্থলী থানার আইসির গাড়িচালক গোপাল দাসের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কোনও পদেই গোপাল চাকরি করেন না। তবু প্রায় এক দশক ধরে গোপাল’ই হয়ে আছেন পূর্বস্থলী থানার আইসির গাড়িচালক। থানার আইসি বদলালেও আইসির গাড়িচালকের পদের বদল হয় না। গাড়ি চালিয়ে সামান্য পারিশ্রমিক পেলেও গোপালের চালচলন ছিল চোখে পড়ার মতো। তার কেতাদুরস্ত আদবকায়দা নিয়ে এলাকায় চর্চা কম ছিল না।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশ লেখা নম্বরপ্লেটহীন ঝাঁ চকচকে একটা বোলেরো গাড়ি গোপাল পূর্বস্থলী থানায় খাটায়। সেই গাড়িতেই আইসি চাপেন। শুধু এটুকুই নয়, গোপালের বিরুদ্ধে আরও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর। নিজেকে থানার ‘ডাকমাস্টার’ বলে পরিচয় দিয়ে গোপাল বালিবোঝাই ট্রাক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্যবাহী গাড়ি থেকে মোটা টাকা তোলা আদায় করাতেও নাকি সিদ্ধহস্ত। গোপাল কিংবা তার বাহিনীকে বালি ট্রাক পিছু ১ থেকে ২ হাজার টাকা না দিলে পূর্বস্থলীতে কোনও বালির ট্রাকের চাকা গড়াতে পারে না।

তবে অভিযোগের এখানেই মেষ নয়। পূর্বস্থলীর পারুলিয়া এলাকায় নিজের বাড়ি তৈরির জন্য জমি কেনা থেকে শুরু দোকান থেকে ইমারতী দ্রব্য নেওয়া… সবেতেই গোপাল তাঁর ‘তোলাবাজি বিদ্যে’কে পুরোদস্তুর কাজে লাগিয়েছে। এনিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে গোপাল দমিয়ে রাখে, এমনই অভিযোগ এলাকাবাসীর।

এদিকে পূর্বস্থলী থানার আইসির গাড়িচালক গোপাল দাসের এই সব দুস্কর্ম নিয়ে পূর্বস্থলীর বাসিন্দারা ক্ষোভে ফুঁষছিলেন। তাতে ঘৃতাহূতি পড়ে পূর্বস্থলীর কালেখাঁতলা এলাকার একটি হোটেলে ‘মধুচক্র’-এর আসর বসা শুরু হলে। গোপাল দাসের তোলাবাজির ডেরা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ওই হোটেলে নিয়মিত মধুচক্র বসার বিষয়টি নিয়ে এলাকার মানুষজন বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় এবং পূর্বস্থলী থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন। এমন অভিযোগ পেয়ে বিধায়ক বেজায় চটে যান । এলাকার মানুষজনকে সঙ্গে নিয়ে বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার বেলায় ওই হোটেলে পৌঁছে যান। সেখান থেকে গোপাল দাসকে ‘পাকড়াও’ করে তিনিই পূর্বস্থলী থানার পুলিশের হাতে তুলে দেন। এরই পাশাপাশি গোপালের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়।

পূর্বস্থলীর বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পূর্বস্থলী থানার আইসির গাড়িচালক গোপাল দাসের দুস্কর্ম সীমা ছাড়িয়ে ছিল। ওই ড্রাইভারের তোলাবাজি সহ নানা কুকীর্তির জন্য এলাকার মানুষজন অতিষ্ট হয়ে উঠেছিলেন। বিধায়ক হিসাবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। দুস্কর্ম এলাকায় চলতে দেওয়া যায় না। তাই গোপাল দাসকে পাকড়াও করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” অন্যদিকে, পূর্বস্থলী থানার আইসি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় জানান, গোপালকে থানায় আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *