ব্যাসদেব ও নারদমুনির আরাধনা দেবী জগদ্ধাত্রীর সঙ্গেই, ইতিহাস জড়িয়ে আছে বনেদি বাড়ির এপুজোর পরতে পরতে
বেস্ট কলকাতা নিউজ : পৌরাণিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী, দেবী জগদ্ধাত্রীর সেবক হিসেবেই মানা হয় ব্যাসদেব ও নারদমুনিকে। তাই দেবী জগদ্ধাত্রীর সঙ্গেই ব্যাসদেব ও নারদমুনির পুজো হয় পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে। পারিবারিক রীতি ও ষোড়শ উপাচার মেনে দেড়শো বছরেরও বেশি সময় ধরে চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো হয়ে আসছে। পারিবারিক পুজো হলেও শক্তির এই দেবীর আরাধনায় মাতোয়ারা গোটা গ্রাম।
জামালপুরের কালীতলা পাড়ার বাসিন্দা চট্টোপাধ্যায় পরিবার। এই পরিবারের অনেকেই কর্মসূত্রে বছরের বেশিরভাগ সময়টাই বাইরে থাকেন। তবে জগদ্ধাত্রী পুজোয় সময় পরিবারের প্রত্যেক সদস্য নিজেদের জামালপুরের পৈতৃক বাড়িতে চলে আসেন। সাবেকি বাড়ির এক পাশে রয়েছে দেবী জগদ্ধাত্রীর মন্দির। মন্দিরের চারপাশ জুড়ে যেখানেই চোখ যাবে সেখানেই দেখা যায় শিল্প নৈপুণ্যতার ছোঁয়া। পুজোতেও শ্রদ্ধা ও ভক্তিভাবের কোনও খামতি থাকে না।
পরিবারের কর্তা দিলীপ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর ছেলে সৌমাল্য চট্টোপাধ্যায় বাড়ির সবাইকে নিয়ে বংশের আরাধ্য দেবী জগদ্ধাত্রীর পুজো-অর্চনা সারেন। পরিবারের কন্যা রুনা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দেড়শো বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের বাড়ির মন্দিরে দেবী জগদ্ধাত্রীর পুজো হয়ে আসছে। আমাদের দেবী প্রতিমাতেও রয়েছে বিশেষত্ব। এক চালার কাঠামোর ত্রিনয়নী দেবী প্রতিমার এক পাশে থাকেন মহাভারতের রচয়িতা ব্যাসদেব। অপর পাশে থাকেন নারদমুনি।”
দেবী জগদ্ধাত্রীর দুই পাশে তাঁদের স্থান দেওয়ার কারণ প্রসঙ্গে রুনা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পৌরাণিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ব্যাসদেব ও নারদমুনি দেবীর সেবক হিসেবেই পরিচিত। জগদ্ধাত্রী পুজোর মন্ত্রেও নারদমুনি ও ব্যাসদেবের উল্লেখ রয়েছে।”
সৌমাল্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের পরিবারে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরুর ইতিহাস সেভাবে কেউ লিখে যাননি। তবে পূর্বপুরুষরা যেমন রীতি ও উপাচার মেনে পুজোর সূচনা করেছিলেন সেই রীতি মেনে আজও আমরা পুজো করে যাচ্ছি। আগে নবমীর দিন ছাগ বলি হলেও এখন তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে ছাঁচি কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। নবমীর দিন মন্দির প্রাঙ্গণে অন্নভোগ গ্রহণ করেন ভক্তরা।”
চটোপাধ্যায় পরিবারের জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে এলাকায় ব্যাপক উন্মাদনা তৈরি হয়। পুজো ঘিরে এলাকাবাসীদের উৎসাহও থাকে তুঙ্গে। দশমীর পুজো শেষে দামোদর নদে চট্টোপাধ্যায় বাড়ির জগদ্ধাত্রী প্রতিমার বিসর্জন হয়।