রমরমিয়ে নারী পাচার গণবিবাহের আড়ালে, অবশেষে পুলিশ পর্দা ফাঁস করল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক মহান কুকীর্তির
বেস্ট কলকাতা নিউজ : খাতায় কলমে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। আদতে নীরা পাচার চক্রের হোতা। দুস্থ পরিবারের মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার নাম করে নিয়ে এসে তাদের লাখ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হত। রাজস্থানের জয়পুর থেকে ৩০ কিমি দূরের বাসসির সুজনপুরা গ্রামে অবস্থিত গায়ত্রী সর্ব সমাজ ফাউন্ডেশনে অভিযান চালিয়ে বিরাট মানব পাচার চক্রের পর্দা ফাঁস করল পুলিশ।

জানা গেছে গরীব পরিবারের বেশ কয়েকটি মেয়েকে এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিক্রি করে দেওয়ার জন্য বিয়ের সাজানো আসরে হাজির করেছিল। সেসব মেয়েদের মধ্যেই একটি ১৬ বছর বয়সী মেয়ে পালিয়ে যায়। সে গিয়ে সোজা থানায় হাজির হয়। খুলে বলে সব কথা। তাঁর কথার ভিত্তিতে গায়ত্রী সর্ব সমাজ ফাউন্ডেশনে হানা দেয় পুলিশ। তখনই সব দুর্নীতির পর্দা ফাঁস হয়। গ্রেপ্তার করা হয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মূল পরিচালক গায়ত্রী, তাঁর সহযোগী হনুমান এবং আরও দু’জন – ভগবান দাস এবং মহেন্দ্র- কে। এই ভগবান ও মহেন্দ্রই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে আসা ওই কিশোরীকে ‘কিনতে’ গিয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, জয়পুরের কাছে গায়ত্রী সর্ব সমাজ ফাউন্ডেশন গরীব পরিবারের মেয়েদের গণবিবাহের আয়োজন করত। এই সংস্থার একাধিক লোক বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা এবং উত্তর প্রদেশের দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের হদিশ জোগাড় করতেন। তারপর পরিবারগুলিকে অর্থের বিনিময়ে মেয়েদের কিনে নেওয়া হত। বলা হত, সংস্থার তরফে ওই মেয়েগুলির বিয়ে দেওয়া হবে। গরীব পরিবারগুলি এতেই খুশি ছিল।
আসলে বিভিন্ন রাজ্য়ের গ্রামে ঘুরে ধুরে যাঁরা এইসব মেয়েদের জোগাড় করতেন তাঁরা ছিল নারী পাচার চক্রের এজেন্ট। এরপর এজেন্টরা ওই সব মেয়েদের সর্বজয়া সর্ব সমাজ ফাউন্ডেশনের হাতে তুলে দিত। সেখানেই বসানো হত গণবিবাহের আসর। যেসব লোকেদের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হত তাদের থেকে আড়ালে আড়াই থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে নিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি। আদলে বিয়ের টোপ দেখিয়ে, টাকা দিয়ে নারী পাচার চলত রমরমিয়ে। মেয়েদের গায়ের রঙ, উচ্চতা এবং বয়স অনুসারে বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করা হত। গায়ত্রী নাবালিকাদের জন্য জাল আধার কার্ডের ব্যবস্থা করতেন, যাতে তাদের বয়স ১৮ বছরের বেশি দেখানো যায়। তিনি প্রায় ১,৫০০টি বিবাহের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে দশটি মামলা ছিল। কিন্তু, আপাতত শ্রীঘরে গায়ত্রী ও তাঁর সহযোগিরা। তদন্তে নেমে পুলিশ এদের সঙ্গে কারা কারা জড়িত তা খুঁজে বার করার চেষ্টা করছে।