বাচ্চারা কি মিড ডে মিল খেল, পড়া ঠিক বুঝলো? এই চিন্তাতেই অবসর নেওয়ার পরেও রোজ স্কুলে আসেন লক্ষ্মী স্যর
বেস্ট কলকাতা নিউজ : স্কুলের গেট পেরিয়ে ছোট্ট উঠোনটাতে পা রাখতেই মনটা ভালো হয়ে যায় লক্ষ্মীকান্ত বাবুর। লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল। এক সময় ছিলেন স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক। তবে এখন প্রাক্তন। তবে এই ‘প্রাক্তন’ কথাটা এখন শুধুমাত্র সরকারি খাতায় সীমাবদ্ধ । তাঁর কাঁধেই আজও স্কুলের সব দায়দায়িত্ব । অবসর নিয়েছেন সবে মাত্র এক বছর হলো। কিন্তু ছাড়েননিনিয়মিত স্কুলে আসা যাওয়া । ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যেন নাড়ির টান তাঁর । শিক্ষক নয় তিনি যেন বাবা। স্নেহ দিয়ে আগলান আবার কখনও প্রয়োজনে শাসনও করেন ছাত্রছাত্রীদের । আজ, শিক্ষক দিবসের দিনেও খবরের শিরোনামে উঠে এল পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত এলাকার এমনই এক স্যরের নাম ।
‘‘বাচ্চারা ঠিক মতো মিড ডে মিল খাচ্ছে তো? প্রার্থনা লাইনে দাঁড়িয়ে কে ঘুমিয়ে পড়ছে? ইংরাজি গ্রামার কে মুখস্থ করতে পারছে না?’’ কচিকাঁচাদের চিন্তাতেই দিন শুরু হয় এই শিক্ষকের। বাড়ি ফিরেও নিশ্চিন্ত নন। ‘‘বাচ্চারা ঠিকমতো পড়তে পারছে তো! আসলে গ্রামের স্কুল তো, বাড়িতে পড়া দেখিয়ে দেওয়ারও কেউ নেই,’’ কালো ফ্রেমের চশমার আড়ালে একজন শিক্ষক নয়, ঠিক যেন মমতামাখা বাবার মুখই ভেসে ওঠে ।
পুরুলিয়ার আমডিহা এলাকার প্রাথমিক স্কুল। নাম শিশু শিক্ষা কেন্দ্র। পড়ুয়ার সংখ্যা তিনশোরও বেশি। আগে ঠিক এমনটা ছিল না, জানিয়েছেন লক্ষ্মীকান্ত বাবুর সহকর্মীরা। আগে বাচ্চারা আসত মিড ডে মিলের লোভে। এখন প্রিয় স্যরের ক্লাস করতেই স্কুলে ছুটে আসে ছেলেমেয়েরা। তাই অনেকটাই বেড়েছে পড়ুয়ার সংখ্যাটাও । শিক্ষক জনা দশ। তবে কেউ ছুটি নিলে তাঁর ক্লাসও লক্ষ্মীকান্ত বাবুই নিয়ে নেন । তাঁর ছুটি নেই, অবসরের ভাবনাও নেই। পড়ানোটাই যেন তাঁর জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে। তাঁর ভাবনা, স্বপ্ন, ভবিষ্যত চিন্তা সব কিছুই পড়ুয়াদের ঘিরেই ।