কেন তিনি অবিচল শত বাধাতেও? অবশেষে মমতাকে বিশ্বভারতীর উপাচার্যের মোক্ষম জবাব কবিগুরুর উদাহরণ তুলে
বেস্ট কলকাতা নিউজ : ইউনেস্কোর হেরিটেজ ঘোষণার পর ফলকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম না দেওয়া নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। কেন ফলকে কবিগুরুর কোনও উল্লেখ নেই? তারই প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ১২ দিন ধরে ধরনা চালিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। এদিকে মেয়াদ শেষ হতে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর। উপাচার্যের মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোনও ঘোষণা হয়নি। এরইমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে অন্যান্য উপাচার্যদের অপমান, পদত্যাদের অবতারণা করলেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিতে প্রথম অনুচ্ছেদে উপাচার্য এক জায়গায় লিখেছেন, ‘আমার জানা নেই কেউ আপনার মতো এত গুণসম্পন্না আছেন কিনা? আপনার সাহিত্য খুব সহজেই কেন স্বীকৃতি পায় তা সহজেই বোধগম্য। আপনার অঙ্কন প্রতিভা আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের কাছে অবাক হবার জন্য যথেষ্ট। আপনাকে কুর্নিশ জানাই।’ পত্রের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে ড. বিদ্যুৎ চক্রবর্তী লিখছেন, ‘আমি একজন ক্ষুদ্র মানুষ। ৪০ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি দেশে ও বিদেশে। রবীন্দ্র গবেষক। যদিও আপনি সাহিত্য সৃষ্টির যে ক্ষমতা দেখিয়েছেন এতটা ব্যস্ত থাকা সত্বেও, সেখানে আমার লেখাপত্রের আলোচনা করে নিজে লজ্জা পেতে চাই না।’
তারপরই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিছু লেখা তুলে ধরেছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য। সেখানে তিনি বলেন খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অপমানিত হতে হয়েছিল, বিতর্কের সম্মুখীন হতে হয়েছে। এমনকী যখন বিশ্বভারতী তৈরির কাজে প্রাণপাত করেছেন তখনও তাকে সমালোচিত হতে হয়েছে। বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এও লিখছেন, ‘শত বিতর্ক গুরুদেবকে নিজের ভাবনাচিন্তাকে কখনও বিরত করতে পারেনি। বরঞ্চ তাঁর লেখা আরও ক্ষুরধার হয়েছে। বেশ কয়কেটি নিদর্শনও দিয়েছেন উপাচার্য। পরবর্তীকালে বিশ্বভারতীর উপাচার্যদের কম অত্যাচার সহ্য করতে হয়নি বলে দাবি করেছেন ড. বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
এই চিঠির ৫ নম্বর পাতায় উপসংহার টেনেছেন উপাচার্য। তাঁর মতে, ‘বিশ্বভারতী দুর্নীতি ও স্বার্থসিদ্ধির আখড়া। মৌচাকে যাঁরাই ঢিল ছুঁড়েছে তাঁদের ভুগতে হয়েছে। গুরুদেব ও তাঁর সুযোগ্য সন্তান রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অশ্রুজলে শান্তিনিকেতন ছাড়তে হয়েছে। স্বয়ং প্রথম উপাচার্য রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অত্যাচারিত ও অপমানিত হয়ে ২ বছরের মধ্যে পদত্যাগ করতে হয়েছিল । পরবর্তীতে অধ্যাপক সত্যেন বোস, অধ্যাপক অম্লান দত্ত, অধ্যাপক সব্যসাচী ভট্টাচার্যকে তাঁদের মেয়াদ শেষের আগেই পদত্যাগ করতে হয়েছিল। বিশ্বভারতীকে বোঝার আগেই উপাচার্যরা আক্রান্ত হন। উন্নতির জন্য পর্যাপ্ত সময় পান না।’
এই চিঠি প্রসঙ্গে বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ ও বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা বলেন, ‘যে কোনও ভাবে কার্যকালের মেয়াদ বৃদ্ধি চাইছেন উপাচার্য। সেই কারণেই এই ধরনের চিঠি লিখেছেন। একসময় তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বহিরাগত বলেছিলেন, এখন নিজেকেই বলছেন রবীন্দ্র গবেষক।’ তবে মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি উপাচার্য।