এ যেন এক হাতছানি ইতিহাস স্পর্শের! ঔপনিবেশিক হুগলির এক খণ্ডচিত্র উদ্ভাসিত মুর্শিদাবাদ সিল্কে
বেস্ট কলকাতা নিউজ : হুগলি নদীর তীরবর্তী পাঁচটি শহর, ব্যান্ডেল, চুঁচুড়া, চন্দননগর, শ্রীরামপুর ও ব্যারাকপুর। এই অঞ্চলটিতে অষ্টাদশ শতক থেকেই ঘাঁটি গেঁরেছিল বিভিন্ন ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তি, ফলে এই অঞ্চলটিকে অভিহিত করা হয় মিনি ইউরোপ নামেও। ব্যান্ডেল-এ পর্তুগীজ, চুঁচুড়ায় ডাচ, চন্দননগরে ফরাসি, শ্রীরামপুরে ড্যানিশ ও ব্যারাকপুরে ব্রিটিশরা ঘাঁটি গেড়ে সমৃদ্ধ করেছে এই অঞ্চলের ইতিহাস, স্থাপত্য, সাহিত্য, ব্যবসা সহ আরও অনেক কিছু।
হুগলি নদীর তীরে কলকাতা ছাড়াও এই অঞ্চলগুলি যে ইতিহাসসমৃদ্ধ, তা অনেক কম মানুষ জানেন, কিন্তু এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইতিহাসের নানা সাক্ষ্য। লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড কালচারের অধ্যাপক ডঃ ইয়ান ম্যাগাডেরা তাই এই অঞ্চলের বৈচিত্র দেখে এটিকে জনসমক্ষে আনার জন্য কাজ করতে শুরু করেছেন। এই মিশনের পোশাকি নাম, ‘রিভারটাইম।’ আঞ্চলিক গবেষক ও স্বেচ্ছাসেবকদের একটি দল নিয়ে তিনি এই অঞ্চলের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পৌছে দিতে চাইছেন বিশ্বে দরবারে। তাঁর এই কাজে ব্রতী হয়েছেন চন্দননগরের হেরিটেজ কনজার্ভেশনিস্ট নেলিন মণ্ডল। এই অঞ্চলের নানান ঐতিহ্যের ইতিহাস তুলে ধরেছেন মুর্শিদাবাদ সিল্কের উপর বাটিকের কাজে।
পাঁচটি মুর্শিদাবাদ সিল্ক দিয়ে তৈরি ব্যানারে দেখানো হয়েছে এই অঞ্চলের পাঁচটি শহরের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও ইতিহাস নির্ভর কিছু খণ্ডচিত্র। মূলত হুগলি ইমামবাড়া হাজী মহম্মদ মহসিন ওয়াকফ এস্টেট-এর তত্বাবধানে এই ব্যানারগুলি প্রদর্শিত হল হুগলি ইমামবাড়ার ভিতরে। বিভিন্ন পর্যটকরা ব্যানারগুলি দেখে ভিড় করলেন এবং ফিরে গেলেন সেই সময় যখন হুগলি নদীই ছিল এই অঞ্চলে একমাত্র বাণিজ্যিক ও ভ্রমণপথ। তখনও রেল আসেনি ভারতে, হুগলি নদীকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলই হয়ে উঠেছিল প্রধান বাণিজ্যস্থল। ডঃ ইয়ান ম্যাগাডেরার কথায়, “তখনকার যুগের কিছু ইউরোপীয় আদব কায়দা এখনও এখানকার মানুষের মধ্যে রয়ে গিয়েছে, এই রিভারটাইম প্রজেক্টের উদ্দেশ্য হল এখানকার মানুষকে তাঁদের ইতিহাস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করে তোলা।” নেলিন জানান, “এইটুকু স্থানে এতগুলি মুখ্য ইউরোপীয় শক্তি ছাড়াও বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির সহাবস্থান সারা ভারতবর্ষের কাছে একটি উদাহরণ।”
হাজী মোহম্মদ মহসিন ওয়াকফ এস্টেটের সম্পাদক আলি সিরাজী এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন, এবং বলেছেন, “এই অঞ্চলের ইতিহাসকে এইভাবে উপস্থাপন করলে এটি মানুষের কাছে এই অঞ্চলের ইতিহাসকে আরও মনোগ্রাহী করে তুলতে সাহায্য করবে।”মুর্শিদাবাদ সিল্কের উপর বাটিকের কাজের ব্যানারটি প্রদর্শিত হবে আগামী ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি যথাক্রমে ডন বস্কো স্কুল ব্যান্ডেল, চন্দননগর স্ট্র্যান্ড ও শ্রীরামপুর কলেজে।