অবশেষে পর্দা ফাঁস সন্দেশ খালির ঘটনার,স্টিং অপারেশনে বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি সন্দেশখালীর এই বিজেপি নেতার
বেস্ট কলকাতা নিউজ : বহুচর্চিত সন্দেশখালির কাণ্ড নিয়ে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। স্টিং অপারেশনের ওই ভিডিও ফুটেজ নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তুমুল শোরগোল শুরু হয়েছে। যদিও ভাইরাল ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি কলকাতা সারাদিন নিউজ। কিন্তু কী আছে ওই ভিডিওতে। ভাইরাল ভিডিওতে সন্দেশখালির এক বিজেপির এক নেতাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, রাজনীতি করতেই মিথ্যে ষড়যন্ত্রের ছক রচনা করা হয়েছিল।
মিথ্যে অভিযোগে তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এমনই বিস্ফোরক দাবি, সন্দেশখালির বিজেপির মন্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালের। আরও চাঞ্চল্যকর, যখন বিজেপির মন্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়াল বলছেন, “তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার না করাতে পারলে আন্দোলন করা যাবে না। শুভেন্দুদা বলেছিলেন, গ্রেফতার না করালে ভোটেও দাঁড়ানো যাবে না। শুভেন্দু অধিকারী টাকা-মোবাইল দিয়ে সাহায্য করেছেন।” সন্দেশখালির বাসিন্দা জবারানি সিংহেরও ভাইরাল ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।
সন্দেশখালি ২ বিজেপি মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়াল এক গোপন ভিডিওতে এমনই দাবি করেছেন। এই ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘আমরা শুভেন্দুদার নির্দেশ সব করেছি। শুভেন্দুদা আমাদের যা করতে বলেছিল করেছি। সন্দেশখালির আন্দোল এতদিন টিকে আছে কেন? শুভেন্দুবাবু দেখেনি? এখনও টিকে আছে। না হলে এই আন্দোলন ধরে রাখার ক্ষমতা কারও নেই। শুভেন্দুদা মোবাইল ফোন, টাকা পাঠিয়েছে। খালি হাতে হবে না। শুভেন্দুদার নির্দেশেই আমরা তৃণমূলের লোকজনকে বুঝিয়ে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ করিয়েছি। শুভেন্দুদা বলেছিল, এটা না করতে পারলে, তাবড় তাবড় মালকে গ্রেফতার না করাতে পারলে তোমরা ওখানে দাঁড়াতে পারবে না।’
কেএই শুভঙ্কর গিরি ? এই গোপন ভিডিওতে গঙ্গাধরকে বলতে শোনা গিয়েছে, শুভঙ্কর গিরি নামে একজন শুরুতে আন্দোলনে সাহায্য করছিল। কিন্তু পরে টাকা নিয়ে সমস্যা হওয়ায় সে সরে যায়। তবে শুভেন্দু শুরু থেকেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। গঙ্গাধর বলেছেন, ‘শুভেন্দুদাই সবকিছু দেখত। ওর পিএ পীযূষও এখানে এসেছে। শুভঙ্করের হাত ধরে ঘুরে বেড়াত। আমাকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। আমিও ওকে গুরুত্ব দিইনি। ও মহিলাদের ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ করতে বলেছিল। কোনও মহিলা না বলেনি। আমরা ওদের যেটা করতে বলেছি সেটাই করেছে।’
রেখা পাত্রও মিথ্যা অভিযোগ করেছেন? ভাইরাল ভিডিওতে গঙ্গাধরকে বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রর নামও করতে শোনা গিয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনও শুভেন্দু বা রেখার সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বও এ বিষয়ে কিছু বলতে চাইছেন না। তবে এই ভিডিও ঘিরে ফের রাজ্য রাজনীতিতে সন্দেশখালি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
সন্দেশখালিতে মহিলাদের উপর নাকি নির্যাতন করাই হয়নি। ভিডিয়োয় তেমনটাই দাবি করছেন বিজেপি নেতা। একসময় সন্দেশখালি ইস্যুতে যখন মাসের পর মাস তোলপাড় হয়ে গিয়েছে রাজ্য-রাজ্যনীতি। সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় স্টিং অপারেশনের এই ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই কার্যত ঘৃতাহুতি পড়েছে। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। টুইটারে পোস্ট করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
ভাইরাল ভিডিয়োয় বলতে শোনা যাচ্ছে বিজেপি নেতাকে, মহিলাদের শিখিয়ে বুঝিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা হয়। কী বলতে হবে, কী করতে হবে সবটা শেখানো হয়। তার পরিবর্তে ২০০০ করে দেওয়া হয়েছে নাকি। রেখা পাত্রকে দিয়ে প্রথমে অভিযোগ করা হয়। পরে বাকিরা করে। ধর্ষণের অভিযোগ সাজিয়ে তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার করা হয়।
এরপর ফেসবুকে পোস্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লেখেন, “কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকা দল রাজ্যকে ক্রমাগত বদনাম করছে। ইতিহাসে এমন নজির নেই। বিজেপির বিসর্জন করবেন বাংলার মানুষ।” অপরদিকে তৃণমূল সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন , “সন্দেশখালির স্টিং ভিডিয়ো দেখে আমি চরম বাকরুদ্ধ। বিজেপি বরাবর বাংলা বিরোধী। তাদের ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে যেভাবে বাংলাকে কালিমালিপ্ত করার জন্য পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করেছে তা প্রত্যেকের দেখা উচিত।”
এদিকে শান্তনু সেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘ঝুলি থেকে বেড়াল অবশেষে বেরিয়ে পড়েছে। আমরা এর আগেও বলেছি সন্দেশখালি নিয়ে BJP বাংলাকে বদনাম করার চেষ্টা করছে। এবার সেই সত্যিটাই ক্রমশ সামনে এল। এর আগে অগ্নিমিত্রা পালের অডিয়ো সামনে এনেছিল। সেখানেও আমরা প্রমাণ পেয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর অতি সক্রিয়তা, সন্দেশখালির মহিলাকে প্রার্থী করা, তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলা এই সবকিছু দিয়েই চক্রান্তের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। আজ এই ভিডিয়োয় সন্দেশখালি নিয়ে বিরাট এক ষড়যন্ত্রর প্রমাণ হয়ে গেল।’