গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে বাড়ছে জল দূষণ, সেই কারণে আস্তানা বদলাচ্ছে পরিযায়ী পাখিরা
নিজস্ব সংবাদদাতা : সকাল তখন প্রায় দশটা। মায়ের হাত ধরে স্কুলের দিকে যাচ্ছিল এক খুদে। আশপাশের সবকিছুই লক্ষ করতে করতে যায় রোজ। তেমনই দেখল এক বিশাল ক্যামেরা নিয়ে ঝিলের পাশে ব্যস্ত এক তরুণ। খুদের কৌতূহলী চোখ তখন সেদিক থেকে যেন নড়ছিল না। মাকে জিজ্ঞেস করে বসল, ‘ওদিকে কী করছে ওই দাদা?’ মা বোঝালেন সেই তরুণ পরিযায়ী পাখির ছবি তুলতে ব্যস্ত। খুদের মনে অনেক প্রশ্ন। জানতে চাইল পরিযায়ী পাখির অর্থ। একটুও বিরক্ত না হয়ে মা’র উত্তর, ‘এগুলো এমন পাখি, যারা শীতকালে অনেক দূরের দেশ থেকে এখানে উড়ে আসে। সাইবেরিয়া থেকে উড়ে আসা এই পাখিরা ঝিলে দিন কাটায় আর শীতের শেষে আবার ফিরে যায়।’ কৌতূহলী সেই খুদে মায়ের হাত ধরে সরাসরি ঝিলের কাছে চলে গেল। তার চোখে তখন বিস্ময়। ঝিলের জলে এখন কয়েকশো পাখি ঘুরে বেড়াচ্ছে। জলে মাথা ঢুকিয়ে খাবার খাচ্ছে কখনও, কখনও আবার জল থেকে একটু উপরে উঠে ডানা ঝাপটাচ্ছে। পথচলতি সকলেই একটু ঘুরে ঘুরে দেখছেন পাখিগুলোকে। কেউ আবার লেন্সবন্দি করতে এগিয়ে আসছেন ক্যামেরা নিয়ে।
এই ঝিলটি আলিপুরদুয়ারের মায়া টকিজ এলাকার পরিচিত এক জায়গা। প্রতিবছর নভেম্বরের শুরুতেই এই পাখি আসতে শুরু করে। আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের সম্পাদক ত্রিদিবেশ তালুকদার বলেন, ‘এক সময় আলিপুরদুয়ারের অন্য ঝিল এবং নদীতেও এই পাখিগুলো দেখা যেত। কালজানি নদী আর ডিমা নদীতেও এদের আনাগোনা ছিল। কিন্তু এখন আর সেসব জায়গায় পাখি দেখা যায় না।’ পরিবেশপ্রেমী শিবুন ভৌমিকের কথায়, ‘ডুয়ার্সের বিভিন্ন ঝিলে সরাল, বালিহাঁস ও ব্রাহ্মণী হাঁস ছাড়াও কিছু শিকারি পাখি, যেমন ওরপ্রে বা মেছো ইগল ও ব্ল্যাক ইগলও দেখা যায়। সমস্যা হয়েছে সব পাখি বুঝতে পেরে গেছে জল দূষিত হয়ে যাচ্ছে, আর এটাই আশ্চর্যের ব্যাপার যারা আসছে এসেই জল দূষণের কথা বুঝতে পারছে।