তাদের” দেবতা ” চলে গেছেন, কিভাবে খাবার পাবেন ? চরম দুঃচিন্তায় টোটোচালক, রেল হকার্স, ফেরিওয়ালারা
নিজস্ব সংবাদদাতা : ক্যান্টিনের গেটে তালা। কানির মোড়ের এক কোণে টোটো রেখে ডিম-ভাত খেতে এসেছিলেন পলাশ সাহা, গৌতম সিং। শাটারের ওপার থেকে এক ব্যক্তি বললেন, ‘জানেন না বাবলা দা আর আমাদের মধ্যে নেই? আদৌ এই ক্যান্টিন আর চলবে কি না, বাড়ির লোকেরা ঠিক করবে।’ সরকারি ক্যান্টিন হলেও গরিব মানুষের জন্য এই ক্যান্টিনের খরচ চালাতেন দুলাল সরকার। মাথায় বাজ ভেঙে পড়ল দুই আগন্তুকের। পলাশ আর গৌতম এর মতো বহু টোটোচালক, রেল হকার্স, ফেরিওয়ালাদের দুপুরের আহারের বন্দোবস্ত ছিল এই ক্যান্টিনে।
লকডাউন চলাকালীন অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েন। রোজগার না থাকায় ঠিকমতো দুবেলা খাবার জুটত না বহু মানুষের। গরিবদের জন্য দুবেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে ত্রাতা হয়েছিলেন দুলাল। কানির মোড় অফিস সংলগ্ন বহুতলের বেসমেন্টে গরিব ও অসহায়দের লঙ্গরখানার ব্যবস্থা করেন। একটানা দুইমাস সেখান থেকে প্রতিদিন বাড়িতে বাড়িতে রান্না করা খাবার পৌঁছে দিতেন তিনি।
এই লঙ্গরখানা থেকেই সারাবছর গরিবের মুখে দুপুরের আহার তুলে দেওয়ার জন্য মায়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ২০২১ সাল থেকেই তিনি চালু করেন মা ক্যান্টিন। মাত্র ৫ টাকায় ডিম-ভাত। দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত এই ক্যান্টিনে যে কেউ ৫ টাকা দিয়ে খেতে পারেন। খরচ বহন করতেন নিজেই। পরবর্তীতে মুখ্যমন্ত্রী মা ক্যান্টিন নামে সরকারি প্রকল্প চালু করেন। কানির মোড় ক্যান্টিনের বোর্ডে সরকারি প্রকল্পের মোহর লাগলেও দুলাল সরকারি সাহায্য নিতেন না। মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত এই ক্যান্টিনের খরচ তিনি নিজেই চালিয়েছেন। তাঁর অকাল প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ঝলঝলিয়া কানির মোড় এলাকায় এদিন সমস্ত দোকানপাট বন্ধ ছিল। শুনসান কানির মোড়ের ক্যান্টিন। কি হবে এই ক্যান্টিনের ভবিষ্যৎ? বলতে পারছেন না কেউই।