মাত্র তিন ফুট উচ্চতা নিয়ে সমস্ত বাধা অতিক্রম নদিয়ার শান্তিপুরের পিয়াসার , NET এ পেলেন ৯৯.৩১ শতাংশ নম্বর
নদিয়া : মাত্র ৩ ফুট উচ্চতা,শরীর জুড়ে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা,সব হেলায় উড়িয়ে দিয়েছে নদিয়ার শান্তিপুর পটেশ্বরী স্ট্রিটের পিয়াসা। জন্ম থেকেই হাঁটাচলার কোনো রকম ক্ষমতা নেই, ঠিকমতো বসতেও পারেন না। কিন্তু ছোট থেকেই পড়াশোনাই তাঁর একমাত্র ধ্যান জ্ঞান। ভয়ঙ্কর প্রতিকূলতা পরেও কিন্তু তাঁর অধ্যাবসায়র কোনও রকম খামতি ছিল না। আর এই মনের জোরকে হাতিয়ার করেই এক অসাধ্যসাধন করেছে সে । প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে নেট পরীক্ষায় কৃতিত্ব দেখিয়েছেন, নদিয়ার শান্তিপুরের বাসিন্দা পিয়াসা মহলদার।
এদিকে মাত্র তিন ফুট উচ্চতার পিয়াসা জন্মের পর থেকেই শিকার হন নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার। নিজের ইচ্ছায় হাঁটতে পারেন না। বসতে পারেন না ঠিকমত। হাতের সাহায্যে ঠিকমতো করতে পারেন না কোনও কাজ। এক পাশে ঝুঁকে ছোট্ট দুটো হাত দিয়েই পড়াশোনা করে আজ তিনি পৌঁছেছেন সাফল্যের শিখরে। হাজার অসুবিধা, হাজার প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে তিনি আজ সৃষ্টি করেছেন নতুন এক ইতিহাসের।

পিয়াসা তার এই সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, শান্তিপুরের একটি কে.জি স্কুলে প্রথম দেড় বছর পড়াশুনা করেছি। সেখানে উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকায় ভর্তি হই স্থানীয় আমড়াতলা গার্লস প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর ক্লাস ফাইভ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করি শান্তিপুরের রাধারানী নারীশিক্ষা মন্দিরে। এরপর, শান্তিপুর কলেজ থেকে স্নাতক ও কৃষ্ণনগর গভর্মেন্ট কলেজ থেকে বাংলায় এমএ করি। পিয়াসা আরও জানান, প্রথমবারের মতো নেট পরীক্ষায় বসে ৯৯.৩১ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। এর ফলে আমি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে কাজ করতে পারবো ভেবেই খুব খুশি হচ্ছি। এছাড়াও, পিয়াসা জানান তিনি যেহেতু নিজে ঠিক মতো কাজকর্ম করতে পারেন না তাই তার সব কাজ বাবা ও মা করে দেয়। হাজার প্রতিবন্ধকতা জয় করে পিয়াসার এই সাফল্যে খুশি তার পরিবারও।
আবার মেয়ের এই সাফল্যে খুশি পিয়াসার বাবা উত্তম মহলদারও। তিনি কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ এক আধিকারিক। মেয়ের সাফল্যের পর তিনি বলেন, ওর জেদ আর হার না মানার মানসিকতার কাছে শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করল সাফল্য।” মেয়ের সাফল্যে খুশি মা-ও। বাঁধ মানছে না তাঁর চোখের জল। সুপ্রিয়াদেবী বলেন, “এই সাফল্য শুধু ওর নিজের কৃতিত্বে। এত লড়াই, এত চেষ্টা, এত ত্যাগ! ওঁকে গর্ভে ধারণ করে আমি সত্যিই ধন্য! ঈশ্বরকে অশেষ ধন্যবাদ।” আর সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এভাবেই আগামীতে এগিয়ে যেতে চায় পিয়াসা।