রানি শিরোমণির গড় সংস্কার, শালবনীতে মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে এলো অতি প্রাচীন এক মন্দির
বেস্ট কলকাতা নিউজ : শালবনী থানার রানি শিরোমণির গড় সংস্কার শুরু হয়েছে। সংস্কার চলাকালীন মাটি খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে প্রাচীন মন্দির ও আটচালা। শালবনী থানার কর্ণগড় এলাকায় বছরের পর বছর ধরে মাটির নীচে চাপা পড়ে থাকা মন্দির, আটচালা বের হতেই উপচে পড়ছে মানুষের ভিড়। এদিন এই মন্দিরের সংস্কারের কাজ দেখতে এদিন মন্দির চত্বরে উপস্থিত হন শালবনী ব্লকের বিডিও রোমান মণ্ডল, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিক বরুণ মণ্ডল সহ অন্যান্য আধিকারিকরা । সেখানে মন্দিরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। জেলা প্রশাসন মন্দির সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ায় খুশি সাধারণ মানুষ।

এদিকে গ্রামবাসীরা জানান, শীত বাড়লে কর্ণগড়ে পর্যটকের ভিড় আরও বাড়বে। অনেকেই মাটির নীচ থেকে বেরিয়ে আসা মন্দির দেখতে আসছেন। শনি ও রবিবার ভিড় বেশি হচ্ছে। প্রশাসনের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ অনুসারে ইতিমধ্যেই এই কাজের জন্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। গোটা কাজের প্রক্রিয়া মনিটর করা হচ্ছে। এছাড়াও গোটা এলাকা সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। যাতে বেশি সংখ্যায় পর্যটক আসে। এদিকে শালবনী ব্লকের বিডিও রোমান মণ্ডল বলেন, গোটা এলাকা জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়েছিল। তাই প্রাচীন ও ঐতিহাসিক এই স্থান সংস্কারের কাজ চলছে। প্রাচীন মন্দির, আটচালা উদ্ধার হয়েছে। একইসঙ্গে অনেক পর্যটক আসছেন। এই ব্লককে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। ‘রানি শিরোমণি ঐক্য মঞ্চ’-এর আহ্বায়ক নিসর্গ নির্যাস মাহাত বলেন, তথ্য ও সংস্কৃতি সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর ভালো কাজ করছে। রানির অন্দরমহল বলে পরিচিত এলাকায় সংস্কারের কাজ শুরু হোক। এই ইতিহাস মানুষকে জানাতেই হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চুয়াড় বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রানি শিরোমণি। কর্ণগড়ের রাজা অজিত সিংহের স্ত্রী ছিলেন তিনি। জানা যায়, অল্প বয়স থেকেই অন্যায় দেখলেই তিনি রুখে দাঁড়াতেন। তৎকালীন সময় ইংরেজরা কর্ণগড় দখলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই সময়ই ইংরেজ বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাড়ান শিরোমণি। তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন এই এলাকার আদিবাসী সমাজের মানুষও। ইংরেজ বাহিনী আধুনিক অস্ত্র নিয়ে লড়াইয়ে নামলেও, দেশীয় লাঠি, বল্লম, তির, ধনুক নিয়ে লড়াই চালান শিরোমণি। তবে চারিপাশ জঙ্গলে ঘেরা এলাকায় লড়াই বেশিক্ষণ চালাতে পারেনি ইংরেজ বাহিনী। কিছুক্ষণ পরেই তারা কার্যত পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল। পরবর্তীকালে রানিকে বন্দি করা হয়। বন্দি অবস্থাতেই রানি শিরোমণির রহস্যজনক মৃত্যু হয় বলে জানা যায়। তারপর বহু বছর ধরে সেই রানির গড় ভগ্নদশায় পড়ে ছিল। পর্যটকরা ঐতিহাসিক সেই স্থান দেখতে এসে নিরাশ হয়ে ফিরে যেতেন। সেই কথা মাথায় রেখেই এই সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

