গলসিতে দামোদর নদ থেকে উঠে এল দেড় হাজার বছরের প্রাচীন বেলেপাথরের মূর্তি, ব্যাপক শোরগোল পড়লো এলাকায়
বেস্ট কলকাতা নিউজ : সন্ধ্যায় দামোদরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন গলসির গোহগ্রামের দাদপুর গ্রামের মনু দাস, অসীম বাগদি, উৎপল বাগদিরা। নদে জাল ফেলে রেখেছিলেন। কিছুক্ষণ পর তা টানতে গিয়ে বুঝতে পারেন বড় কিছু আটকে গিয়েছে। প্রথমে ভেবেছিলেন বড় কোনও মাছ হতে পারে। সেই আশাতেই তাঁরা জলে নামেন। কিন্তু জলে হাত দিতেই অবাক হয়ে যান। অনেক ভারী কিছু আটকেছে। সহজে তোলা যাচ্ছে না। চারজন মিলে কোনওরকমে সেটি তোলেন। জল থেকে যা উঠে এল, তাতে তাঁদের চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগাড়। একটি অক্ষত শিলামূর্তি জালে জড়িয়েছিল। সময় নষ্ট না করে তড়িঘড়ি সেটিকে তাঁরা গ্রামের মন্দিরে নিয়ে আসেন। এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়। সবে উমা কৈলাশে গমন করেছেন। তারপরই অষ্টভুজা মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তি উঠে আসায় ভক্তিতে কপালে হাত ঠেকান গ্রামবাসীরা।

স্থানীয়রা জানান , সবার ইচ্ছে ছিল মহিষাসুরমর্দিনীর মূর্তিটি পুজো করা। সেইমতো প্রস্তুতিও চলছিল। কিন্তু, তার আগেই খবর পেয়ে গলসি থানার পুলিশ গ্রামে পৌঁছে যায়। তারা গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে মূর্তিটি উদ্ধার করে নিয়ে আসে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়াম ও আর্ট গ্যালারির সঙ্গে যুক্ত শ্যামসুন্দর বেরা বলেন, মূর্তিটি আনুমানিক দেড় হাজার বছরের প্রাচীন। দু’ফুট সাড়ে আট ইঞ্চির মূর্তিটি বেলেপাথরের তৈরি। প্রস্থ এক ফুট ন’ইঞ্চি। গঠনশৈলী অত্যন্ত সরল প্রকৃতির। গোহগ্রাম এলাকার বাসিন্দা সুকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, এধরনের মূর্তি আমাদের এলাকায় আগে কোনওদিন উদ্ধার হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে মূর্তিটি জলে পড়ে থাকলেও কোনও ক্ষতি হয়নি। কোনও অংশ ভাঙা নেই।
স্থানীয়রা আরো জানান, এর আগে রায়নায় সূর্য মূর্তি উদ্ধার হয়েছিল। তবে কখনও মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তি উদ্ধার হয়নি। মৎস্যজীবী মনু দাস, অসীম বাগদি বলেন, মূর্তিটি আমরা পুজো করতে চেয়েছিলাম। মন্দিরে এনে রেখেও দিয়েছিলাম। কিন্তু, পুলিশ এসে জানায়, এধরনের প্রাচীন মূর্তি এভাবে রাখা যায় না। তা মিউজিয়ামে রাখতে হবে। গ্রামবাসীরা প্রথমে রাজি হননি।
এদিকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা জানান , এধরনের মূর্তি থেকে প্রাচীন যুগের বহু ইতিহাস জানা যায়। এটি অত্যন্ত মূল্যবান মূর্তি। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়ামে বিভিন্ন যুগের মূর্তি সংরক্ষিত রয়েছে। বাইরে থেকে অনেকেই এখানে এসে ইতিহাস চাক্ষুষ করে যান। প্রতিটি যুগের মূর্তির ধরন আলাদা। গঠনবৈশিষ্ট্য দেখেই মূর্তির বয়স অনুমান করা যায়। এর আগে অজয় থেকে বহু মূর্তি উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন যুগের নানা নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। সেগুলি ঠিকমতো সংরক্ষণ করা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে । এধরনের মূর্তি বা নিদর্শনগুলি সংরক্ষণের জন্য বর্ধমান জেলা প্রশাসন মঙ্গলকোটে মিউজিয়াম তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গলসি থেকে উদ্ধার হওয়া মূর্তিটির অবশেষে ঠাঁই হয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়ামে।