চিঁড়ে ভেজানোর চেষ্টা শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়িতেই! ভোটের ‘ললিপপ’ NRC-CAA! জেনে নিন রাজবংশীদের মনের কথা
বেস্ট কলকাতা নিউজ : বিজেপি বিরোধীরা NRC, CAA নিয়ে সোচ্চার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিএএ ও এনআরসির তীব্র বিরোধী। প্রতিবাদে পথে নেমেছেন, নির্বাচনী প্রচারে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম ইস্যু এনআরসি, সিএএ। কিন্তু তৃণমূলকে সমর্থন করলেও রাজবংশী নেতা বংশীবদন রায়ও কোচবিহারে এনআরসি চাইছেন।
লোকসভা নির্বাচনের মুখেও রাজবংশীরা এনআরসি নিয়ে সোচ্চার। এমনকী কোচবিহারের রাজবংশীদের বড় অংশই এনআরসি চাইছে। তাঁদের বক্তব্য, ভূমিপুত্ররা জীবিকার সন্ধানে অন্যত্র ছুটছে, অন্যদিকে বাইরের লোকজন এখানে এসে প্রভাব বিস্তার করছে। নির্বাচনের সময় রাজবংশীদের ভোট নিয়ে রাজনীতি চললেও তাঁদের অধিকারের মান্যতা না দেওয়ায় বেজায় ক্ষুব্ধ তাঁরা। রাজনৈতিক নেতারা হলুদ গামছা গলায় দিয়ে ঘোরায় কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না রাজবংশীদের একটা অংশ।
ভোট ব্যাঙ্ক। যে কোনও নির্বাচন এলেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এই শব্দ। শুধু সংখ্যালঘু বা আদিবাসী ভোট ব্যাংকেই কিন্তু এখন আর সীমাবদ্ধ নেই। মতুয়া থেকে রাজবংশীদের ভোট ব্যাঙ্ক নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে বড় ফ্যাক্টর। কোচবিহারে লোকসভা নির্বাচনে রাজবংশী ভোট নিজেদের পক্ষে টানতে গলায় হলুদ গামছা দিয়ে ঘুরছে প্রার্থী থেকে নেতা-কর্মীরা। রাজবংশীরা ভোটের সময়ও এনআরসির দাবি করছে। ভূমিপুত্র হলেও সমস্ত রাজনৈতিক দল তাদের ভোটের সময় ব্যবহার করছে বলে মনে করছে রাজবংশীদের একটা বড় অংশ।
আবার বংশীবদন রায়ের মতো নেতা সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেসকে জেতানোর আবেদন জানাচ্ছেন। আর অনন্ত মহারাজ তো বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন। ভারতভুক্তির সময় কোচবিহারকে পৃথক রাজ্য করার কথা বলা হয়েছিল। সেই সাংবিধানিক অধিকার থেকে সরে আসতে নারাজ রাজবংশীরা। এই দাবিতে কিন্তু তাঁরা সকলেই একমত। কেন্দ্র বা রাজ্য দুই সরকারের ওপর তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। রাজবংশীদের একাংশের বক্তব্য, তাঁদের নিয়ে শুধু রাজনীতি হচ্ছে। ৭৩ বছর পরও তাঁরা সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।
এদিকে দ্য গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বংশীবদন রায় কোচবিহারের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে রাজবংশীদের নিয়ে মিটিং করছেন। বংশীবদন এও বলেন, “প্রথমে তৃণমূলের সঙ্গে ছিলাম না। ওরা যখন আমাদের নিয়ে ভাবতে শুরু করল তখন থেকে সাপোর্ট করা শুরু করলাম। আগামী ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে আমরা থাকব। একটা কথা আছে নুন খেলে গুণ গাইতে হয়। আজ যদি কেন্দ্রীয় সরকার বলে চুক্তি মোতাবেক তোমাদের সব কিছু ফেরত দেবে। তবে আজকেই ওনার পক্ষে আমরা কথা বলব। যে রাজনৈতিক দল আমাদের ভাল করবে সেই আমাদের আপনজন।”
কোন কোন কাজ তৃণমূল সরকার করেছে, কেন তাদের সমর্থন করছেন বংশীবদন? সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। এই রাজবংশী নেতা বলেন, “বামপন্থীরা রাজবংশী ভাষায় কথা বললে উগ্রপন্থী বলে কেস দিত। সেই কাজ না করে ভাষা বোর্ড করেছে রাজ্য সরকার। ভাওয়াইয়া শিল্পীদের মর্যাদা দিয়েছে। ভাতা দিচ্ছে। স্কুলে সিলেবাস করে পাঠন-পাঠন শুরু করেছে রাজবংশী ভাষাতে। ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির দাবি বিবেচনা করছে সরকার। ঐতিহ্যে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করেছিল মাঝে। কোচবিহারের মহারাজা জীতেন্দ্র মোহনের নামের হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজ করার সময় নামে বদল ঘটিয়েছিল। কিন্তু আমাদের দাবি মেনে ফের মহারাজার নামে রেখেছেন। পঞ্চানন বর্মনের জন্মদিনে ছুটি দিয়েছেন। তাঁর নামে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে।”
তবে এনআরসি নিয়ে সোচ্চার বংশীবদন রায়। তিনি বলেন, “আমাদের মতে এনআরসি খুব দরকার। ভূমিপুত্র মানুষের চিহ্নিতকরণ খুব জরুরি। এখানকার ভূমিপুত্ররা বাইরে চলে যাচ্ছে কাজের জন্য। যারা ভূমিপুত্র নয়, তাদের সংখ্যা এখানে বেড়েই চলেছে। সিএএ এখানে চাই না। চুক্তি অনুযায়ী আমাদের মতামত ছাড়া এখানে সিএএ বা নতুন কিছু লাগু করতে পারবে না। অন্যত্র সিএএ হলে আমাদের তাতে কোনও আপত্তি নেই। এই দাবির জন্য তৃণমূল কিছু ভাবলে তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না।”