প্রতি বছরই ঘটে চলেছে একই ঘটনা, শীতে শিলিগুড়িতে ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে চারিদিকে

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

শিলিগুড়ি : প্রতিবছরই ঘটছে একই ঘটনা।সকাল পেরিয়ে গেলেই বাতাসের তাপ বাড়ছে। হালকা হাওয়ায় উড়ছে শুকনো পাতা। আর তাতেই উদ্বেগ বাড়ছে শিলিগুড়ির। ফের কি ভুগতে হবে শ্বাসকষ্টে। এমন উদ্বেগের কারণ, অতীত অভিজ্ঞতা। গত দু’দশক ধরে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে শিলিগুড়িতে। শীত পেরিয়ে গরম পড়লেই সন্ধ্যার পরে ধোঁয়ায় ছেয়ে যাচ্ছে শিলিগুড়ির বাতাস। মূলত দুটি কারণে এই ঘটনা ঘটছে।

প্রথমত, মরশুমের এই সময়ে বৃষ্টি নামানোর অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপরে বিশ্বাস করে শিলিগুড়ি লাগোয়া বৈকুণ্ঠপুর ও মহানন্দা বনাঞ্চলের শুকনো পাতা ও ঘাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ, জঙ্গলের ভিতরে যে সমস্ত গোপালকেরা গোরু চরাতে যান, এই কাজটি তাঁরাই করে থাকেন। কারন তাঁদের বিশ্বাস, ধোঁয়া থেকে মেঘ সৃষ্টি হয়ে বৃষ্টি নামবে। সেই বৃষ্টিতে নতুন করে জঙ্গলে ঘাস জন্মাবে। তাঁদের গবাদিপশুর আর খাবারের অভাব হবে না। ফলে শুকনো পাতার সেই আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠছে জঙ্গলে। শুকনো পাতা, ঘাস, ঝোপ থেকে সেই আগুন গাছে গাছে ছড়িয়ে যাচ্ছে। আগুনের ধোঁয়া সন্ধ্যার উত্তুরে বাতাসে শিলিগুড়ি শহরে ঢুকে পড়ছে। বয়স্করা কাশছেন। ছোটরাও কাশছে।

ধোঁয়ার দ্বিতীয় কারণ, শিলিগুড়ির ডাম্পিং গ্রাউন্ড। আবর্জনাপুষ্ট ডাম্পিং গ্রাউন্ডে তৈরি হওয়া মিথেন গ্যাস থেকে সারা বছরই আগুন জ্বলতে থাকে। ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়া। সন্ধ্যায় সেটাও ছড়িয়ে পড়ছে। হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের (ন্যাফ)–এর কোঅর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, ‘শীত বিদায় নেওয়ার সময়ে শিলিগুড়ি শহরে এটা একটা সমাধানহীন সমস্যা। জঙ্গলে আগুন লাগার আগে বৃষ্টি নামলে ধোঁয়া ঠেকানো যায়। না-হলে গোটা শহরের মানুষকে শ্বাসকষ্টে ভুগতে হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, এই ধোঁয়ার হাত থেকে রেহাই মেলার উপায় সকলেই জানেন। কিন্তু কেউই রা কাড়েন না।’

বন দপ্তরের প্রাক্তন কর্মীদের কাছ থেকেই জানা গিয়েছে উপায়। শীত পড়লেই জঙ্গলে ফায়ার লাইনিং তৈরি করে নিতে হয়। ফায়ার লাইনিং মানে, জঙ্গলের এক কম্পার্টমেন্ট থেকে অন্য কম্পার্টমেন্টের মাঝে অন্তত কুড়ি ফুট এলাকা পরিষ্কার করে রাখা। যাতে একটি কম্পার্টমেন্টে আগুন লাগলে পাশেরটায় ছড়াতে না-পারে। সেই সঙ্গে কম্পার্টমেন্ট পিছু একজন করে কর্মী নিয়োগ করা। যাতে কেউ কোনও কারণে শুকনো পাতায় আগুন দিলে যাতে দ্রুত নেভানোর ব্যবস্থা করা যায়। ডাম্পিং গ্রাউন্ডেও একই কৌশল নিতে হয়। আগুন লাগলেই নিভিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করা। এই কাজটাই দীর্ঘদিন ধরে হচ্ছে না শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকায়। কেবল শিলিগুড়ি কেন, বনাঞ্চলে আগুন লাগানোর সমস্যা দার্জিলিং, কার্শিয়াং, মিরিক থেকে কালিম্পংয়েও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *